মঙ্গলবার মধ্যরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে যখন হাজারো মানুষের ঢল, রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগের দাবিতে মুখর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি প্রাঙ্গণ, তার ২ ঘণ্টা আগে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল।
পার্লামেন্টের অনাস্থায় শেষ পর্যন্ত মার্শাল ল’ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিলেও, প্রেসিডেন্ট ইওল গদি বাঁচাতে পারবেন কী না এ নিয়ে এরই মধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা।
বিরোধীরা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত, উত্তর কোরিয়ায় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় সামরিক আইন জারির কোনো বিকল্প নেই- প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলের এ ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষ। প্রবীণ থেকে তরুণ- কোনো প্রজন্মের কাছেই পরিষ্কার নয়, সামরিক আইন জারির প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছিল ঠিক কী কারণে।
এক অধিবাসী জানান, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইউটিউবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা শুনি। প্রথমে ভেবেছি কেউ হয়ত ঠাট্টা করছে। পরে বুঝলাম, সত্যি সত্যি সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।
আরেকজন বলেন, ‘এর কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম দেশে কেউ মার্শাল ল' জারির ঘোষণা দিলেন। একবিংশ শতকে এসে কীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব?’
শুধু জনগণের জন্য নয়, দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও। দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাংগোলা সফরের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, ওয়াশিংটনের সাথে সিউলের চরম ঘনিষ্ঠতা থাকার পরেও আগে থেকে সামরিক আইন জারির বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি।
যদিও হোয়াইট হাউজের বরাতে মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট ইওল মার্শাল ল জারির ঘোষণা দেয়ার পর থেকে পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন।
সিউলের আচরণে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মস্কোও। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সিকে জানান, সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত যথেষ্ট উদ্বেগের। এর জল কতদূর গড়ায় সেদিকে নজর থাকবে মস্কোর।
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্টারমার প্রশাসন। দক্ষিণ কোরিয়ার ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে চলতে ব্রিটেনের নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেসসচিব।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলেও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে বেইজিং। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পারে এমন আশঙ্কাও জানাচ্ছেন চীন।
দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান পরিস্থিতি যে দ্রুতাতার সাথে পাল্টাচ্ছে- তাতে করে দেশটিতে রাজনৈতিক কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকও।