চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বিজয় ঘোষণা করে ফেলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও মঙ্গলবার (৪ জুন) আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন বিজেপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
ভারত রাজস্থান বিজেপির প্রেসিডেন্ট সি পি জোশি বলেন, 'নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আরও একবার সরকার দেখতে চায় এ দেশের মানুষ। বিরোধীদের অনেক মিথ্যাচার সত্ত্বেও জনতার রায় এটাই যে তারা নরেন্দ্র মোদিকে অভিভাবক হিসেবে দেখতে চান।'
টানা তৃতীয় মেয়াদে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে ভোটযাত্রা শুরু করেছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি, কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলটির সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ভারতের ভোটাররা। উচ্চ বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাজনৈতিক মেরূকরণ নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভের মুখে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে একক সরকার গঠনে ৩২ আসন পিছিয়ে আছে বিজেপি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও দলগতভাবে সর্বোচ্চ আসন পেয়ে বিজেপির এই নেতা এ বিজয়কে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের বিজয় আখ্যা দেন।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'আজকের শুভ দিনে এটা নিশ্চিত যে এনডিএ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করবে। বিজেপি ও এনডিএ'র প্রতি আস্থা রাখায় দেশবাসীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। দেশের উন্নয়নে আমরা ভারতীয়রা একসঙ্গে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবো। এই সরকারের তৃতীয় মেয়াদে বড় বড় সিদ্ধান্তের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।'
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রচারণা চালালেও সবশেষ বেসরকারি ফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩টি আসন, যা আগের মেয়াদে ছিল ৩৫৩। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলগতভাবে ৩০৩ আসন পেয়ে বিরোধীদের কোমড় ভেঙে দেয়া বিজেপি এ মেয়াদে পেয়েছে ২৪০ আসন। একক সরকার গঠনে যেখানে দরকার ছিল কমপক্ষে ২৭২ আসন। জোটগত অর্জন ২৯৩ আসন বলে জোটের ওপরই নির্ভর করেই এবার সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে মোদিকে। আশানুরূপ ফল না পাওয়া বিজেপিকে জনগণ বিদায়ের বার্তা জানিয়ে দিয়েছে বলে মোদিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, 'মোদিজি অনেক দলের মধ্যে ভাঙন তৈরি করেছেন। এবার জনতা তাকেই ভেঙে দিয়েছে। তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। তাই আমি চাই যে কারও ওপর নির্ভর না করে আগে আপনি পদত্যাগ করুন। নৈতিক প্রশ্নে মোদিজি পদত্যাগ করুন।'
একই আহ্বান জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও। বুথফেরত জরিপকে ভুল প্রমাণ করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২টি আসন। যা বিগত নির্বাচনে ছিল ১০০ এরও কম। সরকার গঠনে ৪০ আসন কম থাকলেও উৎসবের আমেজে থাকা কংগ্রেস জোটে বিহার-তেলেঙ্গানা থেকে নতুন সদস্য এনে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, 'বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বুধবারের বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। দুই জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাঝে ব্যবধান খুব সামান্য। তাই জোটের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। সহযোগীদের সাথে আলোচনার ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। নতুন অংশীদার নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়া যায় কি না, তা নিয়েই কথা বলবো।'
ক্ষমতায় যেতে জোট সরকার গঠনে এককালের সহযোগী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জনতা দলের নেতা নীতিশ কুমার আর তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তেলেগু দেসাম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইড়ুর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কংগ্রেস। দুই নেতার সমর্থন পেলে ইন্ডিয়া জোটের ঝুলিতে যোগ হবে আরও ২৮টি আসন। তবে, এরপরেও সরকার গঠনে আরও অন্তত ১২টি আসন দরকার হবে ইন্ডিয়া জোটের।