আবারো ওয়াকফ ইস্যুতে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। আবারও পুড়লো যানবাহন। মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, এতিমখানাসহ মুসলিমদের সম্পদ দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াকফ পরিচালিত হয় যে আইনে, সে আইনে সংশোধনী আনতে খোদ দেশের মুসলিমদের সাথেই হয়নি আলোচনা। এতেই ক্ষুব্ধ, আতঙ্কিত ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা।
সংশোধিত আইন কার্যকর হয়েছে আগেই। আইনটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা। সোমবার ওয়াকফ বিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে কলকাতার রামলীলা ময়দানে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলো সর্বভারতীয় ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল আইএসএফ। সমাবেশের অনুমতি নেই জানিয়ে পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা, শুরু হয় সংঘাত।
ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সংশোধিত এ আইন রাজ্যে কার্যকর করবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আশ্বাস দেয়ার পরও আইনটির বিরুদ্ধে সমাবেশ কেন করতে দেয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সংঘর্ষে আহত হয় পুলিশ সদস্যসহ অনেকে। উত্তাপের আঁচ ছড়ায় শমসেরগঞ্জ, জাফরাবাদ, মালদা, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা পর্যন্ত।
এর আগে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ আইন বিরোধী বিক্ষোভের জেরে সহিংসতায় প্রাণ যায় কমপক্ষে তিনজনের। রেল ও সড়কপথ অবরোধ, দোকানপাটে ভাঙচুর-লুটপাট আর যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। মুর্শিদাবাদ সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০০ এ বেশি মানুষকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত।
ক্ষমতাসীন বিজেপি'র দাবি, দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে সংশোধনী আনা হয়েছে ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে গরিবের জমি লুট বন্ধ হবে এবং মুসলিমরা লাভবান হবেন বলে দাবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
এদিকে গেলো কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন নির্বাচনের আগে হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে দ্বন্দ্ব প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠছে ভারতে। ওয়াকফ ইস্যুতে সংঘাতকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার আহ্বান রাজ্য বিজেপি'র।
দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মুসলিম ২০ কোটির বেশি। সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়সহ ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধীদের অভিযোগ, দুর্নীতি দমনের নামে এ আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের স্থাবর সম্পত্তি দখলে নিতে চাইছে মোদি সরকার। নতুন আইন চ্যালেঞ্জ করে বুধবার ১৫টি পিটিশনের শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।