সাম্প্রতিক সময়ে ভারতজুড়ে আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের মতবিরোধ ইস্যু। এরমধ্যেই রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করলেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন। ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট ও ২০২৮ সালের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে কমিটিকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকছেন তিন সদস্য। স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজ্যের একক নিয়ন্ত্রণ ফেরানোর জন্য সুপারিশ করবেন তারা। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুধু তামিলনাড়ুই নয়, ভারতের সব রাজ্যের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল ডিএমকের সঙ্গে বিজেপির দ্বন্দ্বের সূত্রপাত মূলত ভাষা কেন্দ্র করে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন ভাষা ফর্মুলার মাধ্যমে হিন্দি চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ তামিল জনগণের।
ডিএমকের দাবি, প্রচলিত দুই ভাষা ফর্মুলায় ইংরেজি ও তামিল শিক্ষাই যথেষ্ট। তবে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন না করা হলে রাজ্যের জন্য বরাদ্দকৃত আড়াই হাজার কোটি রুপি আটকে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। বিজেপির আগ্রাসী আচরণের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
ভারতের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ডি নেদুনচেজিয়া বলেন, ‘সামর্থ্যবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি তামিলনাড়ু সরকারকে শিক্ষার বরাদ্দ আটকে দেন, সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে শিক্ষার অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যাবে।’
নয়াদিল্লি ও চেন্নাইয়ের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ইস্যু। ক্ষমতাসীন ডিএমকের দাবি, কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত পরীক্ষা নিট এর মাধ্যমে উপকৃত হয় কোচিংয়ে সক্ষম বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা। তাই এর পরিবর্তে দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেডিকেলে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর প্রস্তাব দেয় ডিএমকে।
কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত পরীক্ষা নিট থেকে তামিলনাড়ুকে বাদ দেয়ার আবেদন জানিয়ে ২০২১ সালে বিল পাস করে রাজ্য সরকার। যদিও ৫ মাস সময়ক্ষেপণ করে বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য পার্লামেন্টে ফেরত পাঠান গভর্নর আর এন রাভি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো সংশোধনী ছাড়া বিলটি আবারও পাস হলে তা পাঠানো হয় প্রেসিডেন্টের কাছে। ৩ বছরের বেশি সময় পর চলতি মাসের শুরুতে বিলটি খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এরপরই সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন ডিএমকে।
এছাড়াও জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভায় আসন পুনর্বিন্যাসের মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছে মোদি সরকার। তবে স্টালিন প্রশাসনের দাবি, পার্লামেন্টে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব কমানোর দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত বিজেপি। ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে ভারতের রাজনীতির মাঠে ক্রমেই বাড়ছে উত্তাপ।