অর্থনীতি , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর হলেও তাইওয়ানের রপ্তানির বড় বাজার চীন

বিরোধ থাকা স্বত্ত্বেও তাইওয়ান হচ্ছে চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অন্যতম পছন্দের জায়গা। দেশটির স্মার্টফোনের পার্টসসহ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানির বিশাল বাজার রয়েছে বেইজিংয়ে।

তবে আমদানির জন্য তাইওয়ানকে ভরসা করতে হয় পশ্চিমা বিশ্বের উপর।

২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপরাষ্ট্রটি বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের ১১০ মাইল প্রশস্ত নৌপথটি বিশ্বের প্রযুক্তি বাণিজ্যের অন্যতম রুট। প্রতিবছর বিশ্বের অর্ধেকের বেশি কনটেইনার পরিবহন হয় ব্যস্ততম এ প্রণালী দিয়ে।

এছাড়া চীনের পণ্য অন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকাও রাখে এই রুট।

বিশ্বের সব বড় বড় টেক কোম্পানি তাইওয়ানের তৈরি চিপের উপর নির্ভরশীল। চীনের স্মার্ট ফোনের পার্টস আসে তাইওয়ান থেকে। এছাড়া তাইওয়ানের উৎপাদিত ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, সৌরবিদ্যুতের সেল ও ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতির প্রধান আমদানিকারক চীন। অর্থনৈতিকভাবে দেশ দু'টি একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। গাড়ি থেকে শুরু করে রেফ্রিজারেটর যন্ত্রাংশের জন্য তাইওয়ানের টেক ইন্ডাস্ট্রির উপর ভর করে আছে চীন।

তাইওয়ান অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে চীনের সঙ্গে আমদানির তুলনায় রপ্তানি প্রায় ৫৭ ভাগ বেড়েছে। তুলনামূলক ব্যয় কম থাকায় তাইওয়ানের বিনিয়োগের পছন্দের জায়গা চীন। দেশটিতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে তাইওয়ান। উচ্চমূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও গতবছর তাইওয়ানের রপ্তানিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩২ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। চীনের পর তাইওয়ানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের তালিকায় নবম স্থানে তাইওয়ান। ২০২২ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে ১৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারকে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাইওয়ান মূলত কৃষি ও নিত্যপণ্য সয়াবিন, ভুট্টা, গম, ফল, মাংস ইত্যাদি আমদানি করে থাকে।

স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় হুমকি অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক বিরোধ। মূলত ২০২২ সালে সাবেক মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে অস্থিরতা শুরু। প্রতিবাদে তাইওয়ানের ২ হাজারের বেশি পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন।

এছাড়া এই অঞ্চলে মার্কিন নৌঘাঁটির উপস্থিতি চীনকে অস্থির করে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে এই প্রণালীতে কাউকে মেনে নিতে নারাজ চীনা সরকার।

বর্তমানে তাইওয়ানের অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব। দেশটির তরুণ সমাজ চীনের অংশ হতে চায় না, আবার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্টতাও তাদের পছন্দ নয়।

এদিকে নবনির্বাচিত ডিপিপি দল চীনা বাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে এশিয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ব্লুমবার্গসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছে, তাইওয়ান প্রণালিতে কোনো বাধা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে পঙ্গু করে দিতে পারে। চীনের সঙ্গে বিরোধে আঞ্চলিক অস্থিরতা তৈরি হোক, এমনটা যুক্তরাষ্ট্রও আশা করে না।

এসএস