সুদানে ২ হাজারের বেশি মানুষকে নৃশংস হত্যা, শহর ছেড়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা

সুদান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা | ছবি: সংগৃহীত
0

সুদানের এল-ফাশার শহরের দখল নিয়েছে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। শহরটি দখলে নিতে কয়েকদিনে হত্যা করেছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে। জাতিসংঘ বলছে এরইমধ্য শহর ছেড়ে পালিয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। আরএসএফ বাহিনীর কবলে আটকা পড়ে আছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। সুদানে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। আর এল ফাশার শহরে কেউ নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

২০১৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির সরকারের। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২১ সালে ক্ষমতাচ্যুত করেন দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-আরএসএফ।

এরপর টানা ১৮ মাসের ও বেশি সময় ধরে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা, ঘরবাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন দেয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

গেল রবিবার দেশটির দারফুর অঞ্চলের এল ফাশার শহরে সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটিতে হামলা চালায় আরএসএফ। নিয়ন্ত্রণ নেয় পুরো শহরটির। সেখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি। ফলে সুদানের একসময়ের প্রাণচঞ্চল শহর এল-ফাশার এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।

গেল কয়েকদিনে শহরটির ২ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নির্বিচারে হত্যা করেছে আরএসএফ বাহিনী। ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি স্থানীয় হাসপাতাল, স্কুল এমনকি শরণার্থী ক্যাম্পও। শুধু একটি হাসপাতালেই প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে চারশোর বেশি মানুষ।

আরও পড়ুন:

স্যাটেলাইটের সাহায্যে তোলা এল ফাশার শহরের ছবিতে মাটিতে রক্ত ও মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কিছু ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে আরএসএফ সদস্যরা। এরইমধ্য ভয়ে এল ফাশার শহর ছেড়ে পালিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি বাসিন্দা।

এল-ফাশার থেকে পালিয়ে আসা বাসিন্দারা বলেন, ‘আমরা এল-ফাশারের রাস্তায় হাঁটছিলাম, আমরা দেখতে পেলাম শহরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার পাশেই প্রায় আটজন মারা গেল। তারা আমাদের উটের সাথে ধরে গোলো জলাধারে নিয়ে গেল।’

অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী এক যুবক ছিল, সে তাদের আরএসএফ কে অনুরোধ করেছিল তার সাথীদের হত্যা না করতে। এরপরও তারা, আমার সাথে থাকা যুবক এবং আমার বন্ধুদের হত্যা করে। হঠাৎ করেই তারা কোথা থেকে এসে হাজির হলো আমি জানি না। তিনজন ভিন্ন বয়সের যুবক। তারা বাতাসে গুলি করে বলল, থামো, থামো। তাদের পরনে আরএসএফের পোশাক ছিলো।’

আর আরএসএফ-এর হাতে বন্দী হয়ে আছে দেড় লাখেরও বেশি। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলছে এল ফাশারে এখন আর কেউই নিরাপদ নয়।

জাতিসংঘে আফ্রিকার সহকারী সচিব-জেনারেল মার্থা আমা আকিয়া পোবি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, বাস্তবতা হচ্ছে, এল-ফাশারে কেউই নিরাপদ নয়। শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য বেসামরিক নাগরিকদের কোনও নিরাপদ পথ নেই। সম্প্রতি শহর দখলের পর উত্তর কর্দোফানের বারাহে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস কর্তৃক ব্যাপক নৃশংসতা চালানোর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।’

সুদানের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচারের কথাও বলে সংস্থাটি।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘আল-ফাশির বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আরএসএফ বাহিনী অন্তত ২৫ জন মহিলাকে গণ-ধর্ষণ করেছে। যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইনের এই ধরণের লঙ্ঘনের স্বাধীন, দ্রুত, স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটি প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ।

ইএ