যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে আপাতত নিস্তার পেলেও, ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়া নগরীতে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি লাখ লাখ গাজাবাসী। বিধ্বস্ত বসতভিটায় ফিরলেও খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে তাদের জীবন থেকে এখনও পিছু ছাড়েনি দুঃখ-দুর্দশা। তবুও স্বপ্ন দেখেন নিজ জন্মভূমি গাজাকে নতুন করে গড়ে তোলার।
এই যখন অবস্থা, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কব্জায় রেখে গাজাকে ঢেলে সাজাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা। গাজা দখলে নিতে ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাবে নিন্দার ঝড় তুলেছেন উপত্যকাটির বাসিন্দারা। কিছুতেই পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যকোনো দেশে যেতে চান না তারা।
ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পুনর্গঠনের অজুহাতে আমাদের তাড়িয়ে দেয়া মেনে নেবো না। এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রথমেই ইসরাইলকে সাহায্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’
আরেকজন বলেন, ‘অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। কারণ গাজার মানুষ তাদের ভূমি, দেশ এবং মাটি ছেড়ে কোথাও যাবে না।’
গাজা উপত্যকা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভূখণ্ডটির স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসও। এমনকি গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ইচ্ছাকে আগুনে ঘি ঢালার সঙ্গেও তুলনা করেছেন দোহায় থাকা হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জরুরি ভিত্তিতে ওআইসি সম্মেলন আয়োজনের আহ্বানও জানান তিনি।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জত আল-রেশিক বলেন, ‘আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে তার দেয়া বিবৃতি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ এই ধরনের কথা আগুনে ঘি ঢালছে। আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো আরব-ইসলামী জাতি দ্বারা সমর্থিত। সবাই মিলে ফিলিস্তিনি জনগণকে নির্বাসিত করার এবং ভূমি থেকে সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়া হবে।’
গাজা দখল, শাসন ও নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন ইয়েমেন ও জর্ডানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও। ট্রাম্পের ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করেন জর্ডানের এক সাংসদ। এমনকি ট্রাম্পের ইচ্ছাকে নিছক পাগলামি বলেও আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে।
ইয়েমেনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ট্রাম্পের কথায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাথে আছেন। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ইয়েমেনিরা সবসময় গাজার সাথে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
ট্রাম্পের কথা শুনে নিজ ভূমি থেকে বেরিয়ে আসা গাজাবাসীর জন্য অসম্ভব। এজন্য তারা তাদের দেশের জন্য এতো মানুষ হারায়নি।
জর্ডানের সংসদ সদস্য সালেহ আল আরমুতি বলেন, ‘ট্রাম্প যা ঘোষণা দিয়েছেন তা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি এবং জাতিসংঘ সনদের সরাসরি লঙ্ঘন। এমনকি এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জর্ডান, মিশরের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলেও বিবেচিত। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব, জর্ডানের সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এই ইহুদিবাদী প্রকল্পের বিরোধিতা করে।’
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও, গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলিরা। তবে, এটির বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন বেশিরভাগ ইসরাইলি।
ইসরাইলিদের একজন বলেন, ‘এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তাই দেখার বিষয়। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ এটি করে দেখাতে পারেন, তিনি একমাত্র ট্রাম্পই।’
আরেকজন বলেন, ‘আমার মনে হয়ে এতে মধ্যপ্রাচ্য শান্ত হবে। আমি মনে করি আমরা সৌদি আরবের সাথে কিছু করতে সক্ষম হব। তবে এখন আমাদের সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গাজা থেকে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা।’
৬০ হাজারের বেশি গাজাবাসীকে হত্যার পর প্রথম পর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে ৪২ দিনের জন্য হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি হয় ইসরাইল। এর আওতায় ধাপে ধাপে চলছে বন্দিবিনিময়। ৩৩ জিম্মির বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ৯শ' কারাবন্দি ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেয়ার কথা ইসরাইলের।