বিদেশে এখন
0

মার্কিন নির্বাচনের খরচ কত!

প্রতিবার নির্বাচনের মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয় প্রচারণার পেছনে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি বিলিওনিয়ারদের কাছ থেকে আসা এই অর্থ কোন কোন দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। চলতি বছর শুধু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনেই ব্যয় ছাড়াতে পারে ১ হাজার কোটি ডলার। রাজনীতিতে অর্থায়নে সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান 'ওপেন সিক্রেটস' বলছে, যেকোনো বারের তুলনায় ২০২৪ সালের নির্বাচনে অর্থায়ন ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সব রেকর্ড।

নির্বাচনের শেষ সপ্তাহের পুরোটাই লাস ভেগাসে কামালার হাস্যোজ্জল এই বলয় নির্বাচনী প্রচারণারই অংশ। ৫১৬ ফিট প্রশস্ত ও ৩৬৬ ফিট লম্বা কামালার এই রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন, নির্বাচনী মৌসুমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রচারণা। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ ডলার। ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে কামালা কয়েক মাসেই প্রচারণার ঝুলিতে পেয়েছেন ১শ' কোটি ডলার। তার ওপর প্রচারণাতেও ব্যয় হয়েছে ১শ' কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংক বলছে, এই অর্থ বিশ্বের ১৪ টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি। অথচ মাত্র একটা নির্বাচনে ব্যয় হয় এরচেয়েও বেশি অর্থ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডইমপ্যাক্ট বলছে, জুলাইতে হ্যারিস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞাপনেই ১১০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ডেমোক্রেটরা। যা রিপাবলিকানদের তুলনায় ৪০ কোটি ডলার বেশি। মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দুই দল মিলে এই বিনিয়োগ ২১০ কোটি ডলার। পুরো নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনেই বিনিয়োগ ছাড়াতে পারে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি। ২০২০ সালের তুলনায় তা ১৯ শতাংশ বেশি।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১শ' কোটি ডলার পেয়ে ৮৮ কোটিই প্রচারণায় ঢেলেছে ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা ৫৬ কোটি ডলার পেয়ে বিনিয়োগ করেছে প্রায় পুরোটাই। প্রতি নির্বাচন মৌসুমেই যুক্তরাষ্ট্রে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয় প্রচারণার পেছনে। কিন্তু কোথা থেকে আসে এতো অর্থ?

বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন। চলতি বছরের জুনে যখন নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসকে মনোনয়ন দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, এরপর থেকে ডেমোক্র্যাটরা ভাসছে তহবিলের জোয়ারে। সেসময় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় কামালার প্রচারণা তহবিলে এসেছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এরপর থেকে হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য উঠেছে রেকর্ড তহবিল, তিন মাসে ১শ' কোটি ডলার। প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ এসেছে তার ঝুলিতে। সেপ্টেম্বরেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে তহবিলে ৩৭ কোটি ডলার পেয়েছেন কামালা। তবে একেবারে পিছিয়ে নেই ট্রাম্প। সেপ্টেম্বরে তিনি পেয়েছেন ১৬ কোটি ডলার। জুনের একটি প্রচারণার আয়োজনে মাত্র ৪৫ মিনিট কথা বলে তহবিলে যুক্ত করেছেন ৫ কোটি ডলার। নিউইয়র্কে বন্দুক হামলা ও হত্যাচেষ্টাকে ইস্যু করে দাতাদের কাছ থেকে পেয়েছেন লাখ লাখ ডলারের তহবিল।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থায়ন নির্ভর করে কিছু নীতির ওপর। চেষ্টা থাকে দুর্নীতি যেন না হয়, তহবিল যেন স্বচ্ছ উপায়ে ব্যয় হয় সেটা নিশ্চিতের। জাতীয় নির্বাচন কমিশন পুরো নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ব্যক্তি, সংস্থা আর প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য অর্থ দিতে পারেন। তবে কোন প্রার্থী কত পাবেন, তা নিয়ে থাকে বিধিনিষেধ। আইন অনুযায়ী, প্রতি নির্বাচনে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩শ' ডলার দিতে পারেন দাতারা। প্রত্যেক দলেরই কমিটি থাকে এই তহবিল সংগ্রহে। নিজেদের প্রচারণায় নিজেরাও অর্থায়ন করতে পারে।

এই প্রচারণা তহবিলের জন্য রাজনৈতিক কার্যনির্বাহী কমিটি -প্যাক কাজ করে। এই কমিটি সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা প্রচারণায় দেয়। সেক্ষেত্রে প্রার্থীরা জনপ্রতি পান সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার। এই কমিটি প্রতিনিধিত্ব করে জ্বালানি বা বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। আরেকটি নির্বাহী কমিটি - সুপার প্যাক কাজ করে প্রার্থীর পক্ষের ব্যক্তি আর সংগঠন নিয়ে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে যত খুশি ততো অর্থ দিতে পারে সুপার প্যাক। তবে সরাসরি প্রার্থী বা প্রচারণায় তহবিল দিতে পারে না সুপার প্যাক।

এতেই ধনকুবেররা সুযোগ পায়, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে যতো খুশি ততো তহবিল দিতে। যে কারণে রাজনীতিতে এতো অর্থ ব্যয় এরমধ্যেই ভাবিয়ে তুলেছে মার্কিনদের। সুপার প্যাক সবসময় গুরুত্বপূর্ণ তহবিলদাতা আর তাদের পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখে, তাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়, সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না কোথাও।

বিতর্কিত টেক ধনকুবের আর বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন, জুলাইতে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমেরিকার সুপার প্যাকে মাসে সাড়ে ৪ কোটি ডলার দেবেন। ব্যাটল গ্রাউন্ড স্টেটগুলোতে ভোটার নিবন্ধন আর আগাম ভোটের সময় তার তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া তদন্তের মুখে পড়ে। এরমধ্যেই আরেক রক্ষণশীল বিলিওনিয়ার ট্রাম্পের তহবিলে দেন সাড়ে ৯ কোটি ডলার।

এই কালো অর্থের উৎস নিয়ে বিস্তারিত জানাতে চান না তহবিল দাতারা। স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা তাই নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ওপেন সিক্রেটসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২৩ আর ২০২৪ সালে যে পরিমাণ কালো অর্থের জোগান হয়েছে, তাতে ২০২০ সালের অজানা উৎস থেকে পাওয়া ৬৬ কোটি ডলারের আকারও ছাড়িয়ে যাবে এবার, এমনটাই আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

ইএ