বিদেশে এখন
0

‘অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশের মানুষই স্বৈরশাসন মেনে নিচ্ছে’

দেশে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া আর অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিলে বিশ্বে কমতে পারে ধনী দরিদ্র বৈষম্য। চলতি বছর নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদদের মতামত অনুযায়ী, গণতন্ত্রের চর্চা কঠিন হলেও এই গণতন্ত্রই এনে দেয় সমৃদ্ধি। তবে সাধারণ মানুষের গণতন্ত্রের ওপর আস্থা না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অনেক দেশের মানুষই স্বৈরশাসনকে সাধারণভাবে মেনে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দুর্নীতি আর স্বৈরশাসনে লাগাম টানার বিকল্প নেই বলেও মত তাদের।

রোববার (১৩ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো ২০০৬ সালের পর সবচেয়ে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ঘুরে দাঁড়ালেও করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক দরিদ্র দেশ। ঋণদাতা সংস্থাটি জানায়, পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় কমেছে ১৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ২৬টি দরিদ্র দেশ, যেখানে বিশ্বের অতি দরিদ্র ৪০ শতাংশ মানুষের বসবাস, সেই দেশগুলো অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম ঋণগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। দরিদ্র দেশগুলো কেন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারে না, এক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা আর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা কী, সেই বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য মাত্র একদিন আগেই অর্থনীতিতে নোবেল পান তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ।

নোবেল পুরস্কার জয়ের পর বিশ্ব অর্থনীতি আর নিজেদের গবেষণা নিয়ে মত প্রকাশ করেন তারা। বলেন, দুর্নীতি আর স্বৈরশাসনের কারণে অনেক সময় দরিদ্র দেশগুলো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকে পড়ে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডারন আসেমোলু বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান আর আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে সমৃদ্ধি আনতে গণতন্ত্রের বিশেষ প্রয়োজন।’

ডারন আসেমোলু আরো বলেন, ‘শিল্পোন্নত বিশ্বে গণতন্ত্রের সমর্থন তলানিতে। মানুষ এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে একনায়কতন্ত্র আর স্বৈরশাসনে। সামরিক শাসনেও তাদের কিছু যায় আসে না। কারণ গণতন্ত্র এখন আর সবার জন্য কথা বলে না, সমৃদ্ধি ছড়িয়ে দেয় না। যদি গণতন্ত্র অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করতো, মানুষের সমর্থন থাকতো। এজন্য দুর্নীতি ছাড়া সুশাসন প্রয়োজন।’

আরেক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সিমন জনসন বলেন, ‘নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে শুধু প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হবে না, সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়বে।’

তিনি জানান, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, চীনের পুনর্গঠন অনেক দেশে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার মানুষ একনায়কতন্ত্রের জন্য কষ্ট করেই যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে সরকারকে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে আসতে হবে।

সিমন জনসন বলেন, ‘শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়তে সময় লাগে। কিন্তু ভেঙে ফেলতে সময় লাগে না। নির্বাচনে গণতন্ত্র নিশ্চিতের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। অনেক কিছু আপনার পছন্দ নাই হতে পারে। সেজন্য নির্বাচন বর্জন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন না। কারণ এই সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিকভাবে আসে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র ছাড়া দারিদ্র্য থেকে মুক্তি সম্ভব না।’

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদরা বলেন, শুধু প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা আর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নয়, জলবায়ু পরির্বতনের কারণেও ধনী দরিদ্র দেশ আর মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা পরিকল্পনা নিলেও দরিদ্র দেশগুলো আটকে আছে এক জায়গাতেই। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমিয়ে আনতে সমন্বিত পরিকল্পনার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই তিন অর্থনীতিবিদ।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর