হামাসকে নির্মূলের নামে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় নির্মমভাবে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এই বর্বরতা থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার নামে লেবাননকেও গাজা ভূখণ্ডের মতো ধ্বংসের নগরীতে পরিণত করার নতুন ফ্রন্টলাইন খুলেছে ইসরাইল। একইসঙ্গে হামাস ও হিজবুল্লাহকে রসদ জোগানো ইরানকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এ অবস্থায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। ঠিক এমন সময় আগুনে ঘি ঢালার মতো তথ্য সামনে আনলো মার্কিন সংবাদ নিউইয়র্ক টাইমস। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটির দাবি, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালানো হলেও, হামাস আরও দুই বছর আগে থেকে সেই হামলার পরিকল্পনা করছিলো। তবে আক্রমণে ইরান ও হিজবুল্লাহকে যুক্ত করার চেষ্টায় হামলার সময় এক বছর পিছিয়ে যায়। এই প্রতিবেদনটির ভিত্তি হিসেবে দাবি করা হয়, গত জানুয়ারিতে গাজায় জব্দ করা একটি কম্পিউটার থেকে গোপন বৈঠকের ভিডিও পায় ইসরাইল। সেখানে ইসরাইলে হামলার ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
এর জবাবে তেহরান বলছে, ইসরাইলে চালানো হামাসের হামলার সঙ্গে ইরান কিংবা হিজবুল্লাহকে যুক্ত করার কোনও দাবিই সত্য না। এমনকি এটি বিশ্বাসযোগ্যও নয়। বানোয়াট নথির ভিত্তিতে পুরো প্রতিবেদনটি করা হয়েছে বলেও দাবি ইরানের। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য নিজেদের বৈধতার পাল্লা আরও পাকাপোক্ত করতেই হয়তো এই মুহূর্তে ভুয়া তথ্য-উপাত্ত সামনে আনছে ইসরাইল।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর আগ্রাসী আচরণের কারণে হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাই নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তেল আবিব। জিম্মিদের ছবি হাতে উত্তপ্ত স্লোগান দিতে দেখা গেছে অন্তত এক হাজার বিক্ষোভকারীকে। ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের দাবি।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। আমাদের এটি মোটেও স্বস্তির না। যতক্ষণ না আমরা সবাইকে ফিরে পাচ্ছি, ততদিন পর্যন্ত আমরা এভাবে দাবি জানিয়ে যাবো।’
আরেকজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আমাদের সরকারে থাকা অনেককেই ক্ষমা চাইতে হবে। এর এক নম্বর কারণ হলো তারা জিম্মিদের কথা মোটেও ভাবছেন না।’
তবে নেতানিয়াহু প্রশাসনে জোর দাবি করে আসছে যে, গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসকে চাপে রাখলেই ১০১ ইসরাইলি জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। এটি বলতে বলতে এক বছরের বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালিয়ে গাজায় ৪২ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। মানবিক সংকটে বিপর্যয়ের মাত্রাও চরম পর্যায়।