সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জটিল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। ইসরাইলি ভূখণ্ডে ইরানের হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই লেবাননের দক্ষিণে ওদাইসি শহরে অনুপ্রবেশকারী ইসরাইলি সেনাদের হঠাতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ। প্রাথমিকভাবে সাফল্যও মিলেছে বলে দাবি গোষ্ঠীটির।
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে সারা বিশ্বে উৎকণ্ঠার মধ্যেও পরিস্থিতির জন্য মিত্র ইসরাইলকে দায় দিতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। বরং ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে বিশ্বনেতাদের নিয়ে জোট বাঁধার চেষ্টা করছে মার্কিন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, 'পাঁচ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সরাসরি ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইরান। প্রায় ২শ' ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে। এই হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সারা বিশ্বের উচিত এর নিন্দা জানানো।'
যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে ইসরাইলের পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশ্বনেতাদের। যেকোনো মূল্যে সর্বাত্মক হামলা ঠেকানোর আহ্বান জাতিসংঘের।
যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'আমরা ইসরাইলের পাশে আছি এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশটির আত্মরক্ষার অধিকারে সমর্থন জানাচ্ছি। ইরানকে এসব হামলা বন্ধ করতেই হবে।'
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা বলেন, 'ইসরাইল সরকারের আচরণে আমি ক্ষুব্ধ। হত্যার বদলে ইসরাইলকে আলোচনায় বসতে নৈতিক বা রাজনৈতিক কোনোভাবেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বাধ্য করতে পারছে না। এটি ব্যাখ্যাতীত।'
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, 'অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। যেকোনো মূল্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঠেকাতে হবে এবং লেবাননের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে।'
পরিস্থিতির জটিলতায় বুধবারই মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঠেকানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে ইরাক যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি দেখবে বিশ্ব।
যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, 'আমার ভয় হচ্ছে যে ইরাকে ২০০৩ সালের নিজেদের ভয়াবহ ভুল, ব্যর্থতা আর অপরাধের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলে নেতানিয়াহুর মতো চরিত্ররাই ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে এনেছিল। আমি মনে করি তেমনই আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং এই যুদ্ধ ২০০৩ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।'
রক্তপাত-সমালোচনা-চাপ সব উপেক্ষা করে এখনও যুদ্ধের নীতিতে অটল ইসরাইল। লেবাননে স্থল অভিযানের জন্য অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব।