গাজায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান মানুষের ওপর বন্দুক হামলায় শতাধিক নিহতের ঘটনায় তোলপাড় বিশ্ব। ইসরাইল বলছে, ত্রাণবহর লুটের চেষ্টা চালায় ফিলিস্তিনিরা। তাই গাজাবাসীর ওপর ট্রাক চালিয়ে দেন চালক। তবে ইসরাইলের মিথ্যাচারের প্রমাণ দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, ভোররাতে অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর বন্দুক হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ সেনারা। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে বিবিসি বলছে, নাবলুসিতে গণহত্যা চালানোর সময়কার দৃশ্য এটি।
ড্রোনে ধারণকৃত ২টি ভিডিও প্রকাশ করে ত্রাণবহর লুট করার চেষ্টা চালানোর যুক্তি দেয় আইডিএফ। বিবিসি জানিয়েছে, একটি নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সের বদলে ভিডিওগুলোর মাঝে কয়েকটি কাট দেয়া হয়। তবুও দেখা যায়, ত্রাণবহরের পাশেই রয়েছে ইসরাইলের কামান। ফিলিস্তিনিদের নড়াচড়া করতে দেখা গেলেও কামানের পাশে আছে কয়েকটি নিথর দেহ। কিন্তু এর পাশে নেই মানুষের জটলা।
বন্দুক হামলার সময় উপস্থিত সাংবাদিক মাহমুদ আওয়াদেয়া'র সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। মাহমুদ আওয়াদেয়া জানান, ত্রাণবহর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বন্দুক হামলা চালায় আইডিএফ সেনারা। গুলিবিদ্ধদের উদ্ধারের জন্য কেউ সামনে গেলে তাদের ওপরও চালানো হয় হামলা। এজন্য ঘটনাস্থলে হাজারো মানুষ থাকলেও মরদেহের আশেপাশে খুব কম মানুষ দেখা যায়।
ইসরাইলের কামানের পাশে পড়ে আছে কয়েকটি নিথর দেহ। ছবি: বিবিসি
হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ শুরু হলেও ইসরাইল কতটুকু সফল হয়েছে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। যদিও ১০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহু প্রশাসনের। বিবিসি যাচাই করে জানিয়েছে এ যুক্তিটিও মিথ্যা।
যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় নিহত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের এই সংস্থাটির তথ্য বলছে, যুদ্ধে মোট নিহতের ৭০ শতাংশ বা ২১ হাজারের বেশি নারী ও শিশু। সে হিসেবে বাকি ৯ হাজার মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক। এদের মধ্যে অনেকেই বয়োবৃদ্ধ। তাই হামাস যোদ্ধা নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও কম।
গেল ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইডিএফ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে সর্বমোট ২৮০টি ভিডিও পোস্ট করেছে। এরমধ্যে মাত্র কয়েকটি ভিডিওতে হামাস যোদ্ধাদের হত্যার দৃশ্যমান প্রমাণ রয়েছে। আইডিএফ এর অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে কোনো অভিযানে হামাস যোদ্ধাদের হত্যা করলে এর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়। ১৬০টি পোস্ট বিশ্লেষণে বিবিসি জানিয়েছে এই সংখ্যা ৭১৪জন। বাকি ২৪৭টি পোস্টে কয়েকজন, ডজনখানেক বা অর্ধশতাধিক এর মতো শব্দ ব্যবহার করায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা বের করা অসম্ভব।
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রেইগ জানান, হামাস পরিচালিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিহত সকল ব্যক্তিকে যোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করছে ইসরাইল। তাই বৃহৎ দৃষ্টিতে ১০ হাজার যোদ্ধা নিহতের দাবি করলেও প্রকৃত সংখ্যা অনেক কম হতে পারে।




