ইমরান খান কারাবন্দি থাকায় অনেকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে আছে পাকিস্তানের রাজনীতি। একইসময় মন্দা হাওয়ায় টালমাটাল হয়েছে দেশটির অর্থনীতিও।
বর্তমানে ৯.৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে ইসলামাবাদ। মাথার ওপর ঋণের বোঝা ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। যার প্রায় ৩০ শতাংশই চীনা ঋণ।
দিন যতোই যাচ্ছে ততোই ঋণের জালে ফাঁসছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত এ দেশটি। তিন বছরের মধ্যে ৯ হাজার কোটি ডলার ঋণ পরিশোধের চাপে রীতিমতো ঘুম হারাম অবস্থা শেহবাজ শরিফ সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের কাছ থেকে আরও ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে পাকিস্তান।
২০২২ সালে ইমরান খানের পতনের পর শেহবাজ শরিফ সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০২৩ সালের জুনে তাদের অনুরোধে পাকিস্তানের সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে পৌঁছায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর জোট গঠন করে আবারও ক্ষময় ফেরেন শেহবাজ শরিফ। এরপর গেলো জুলাইয়ে আইএমএফের সঙ্গে নতুন করে আরও ৭০০ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণচুক্তি হয়।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ১৯৫৮ সালের পর আইএমএফের সঙ্গে হওয়া ২৫তম বেলআউট চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ঝুলছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। ঋণে বিধ্বস্ত দেশটি আইএমএফের বেলআউট শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি বিস্ফোরক এক মন্তব্য করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। বলেন, ঋণ তহবিল ছাড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে পাকিস্তানকে দেউলিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে আইএমএফ। এছাড়াও, বর্তমান ভূ-রাজনীতি ঋণচুক্তির অর্থ ছাড়ে বিলম্বের অন্যতম কারণ বলেও দাবি করেন তিনি।
দার আরও বলেন, 'যতবারই পাকিস্তান অর্থনৈতিক সাফল্যের দিকে অগ্রসর হয়েছে, ততবারই দেশটিকে টেনে নিচে নামানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।'
যদিও, ইসহাক দারের এসব মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অর্থনীতিবিদদের মতে, আইএমএফের প্রধান দু'টি শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। এর মধ্যে অন্যতম হল, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের ঋণের অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করা। যার বাস্তবায়ন তো দূরে থাক, উল্টো দেশগুলো থেকে আরও ঋণ নিচ্ছে ইসলামাবাদ। এছাড়াও, আগস্টে বিদ্যুৎ ভর্তুকি হিসেবে পাঞ্জাব প্রদেশের জন্য ১৬ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণাও বিপাকে ফেলেছে দেশটিকে। আর এসব কারণেই ঋণ ছাড়ে আইএমএফ বিলম্ব করছে বলেও মত তাদের।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করছে। এরমধ্যে শেহবাজ সরকার এবং ইমরান খানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব অন্যতম। কারণ পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ- পিটিআইয়ের দাবি, সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাদের ম্যান্ডেট চুরি করেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ।
তবে, ভূ-রাজনীতি নিয়ে ইসহাক দারের মন্তব্য একবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ওপর পুরোপুরি ভর করে আছে মার্কিন আধিপত্য। তাই পাকিস্তানের বিপাকে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ার বিষয়টি। আর এতেই হয়তো পাকিস্তানকে আরও কঠিন শর্ত দিচ্ছে আইএমএফ। তাই শেষ পর্যন্ত চুক্তির শর্ত নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে পাকিস্তান।