বিশ্বজুড়ে ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক। চীনা এই অ্যাপটির মাধ্যমে নতুন ভিডিও তৈরি করা ছাড়াও অন্যের ভিডিওতে ঠোঁট মিলিয়ে ছড়িয়ে দেয়া যায় অন্তর্জাল দুনিয়ায়।
২০১৬ সালে চালু হবার পর বিশ্বজুড়ে টিকটকের ব্যবহারকারী পৌঁছেছে ২০৫ কোটিতে, যার মধ্যে ১৭ কোটিই মার্কিন নাগরিক। তবে গ্রাহকদের তথ্য চীনা সরকারের কাছে পাচারের অভিযোগ অনেক দিনের। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি অঙ্গরাজ্যে সরকারি কর্মীদের মুঠোফোনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে টিকটকের ব্যবহার। এবার দেশজুড়ে অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।
বুধবার (১৩ মার্চ) মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপন করা হয়েছে ৬ মাসের মধ্যে টিকটকের মালিকানা পরিবর্তনের প্রস্তাব। এ সময়ের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স থেকে মালিকানা পরিবর্তন না করা হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিষিদ্ধ হবে টিকটক। বুধবার প্রস্তাবটির বিপক্ষে ৬৫টি ভোট পড়লেও পক্ষে ছিলেন ৩৫২ জন। নিম্নকক্ষে পাস হবার পর বিলটি পাঠানো হবে উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানেও পাস হলে জো বাইডেনের স্বাক্ষরের পর বিলটি পরিণত হবে আইনে।
মার্কিন কংগ্রেসম্যান মাইক গ্যালাহার বলেন, 'জাতীয় নিরাপত্তার জন্য টিকটক বড় ঝুঁকি। কারণ এর স্বত্বাধিকারী বাইটড্যান্সের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পৃক্ততা আছে। বাইটড্যান্স কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি জানিয়েছে। এমনকি চীনের আইন অনুসারে দলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাই এই বিলটি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে টিকটকের সম্পর্কচ্ছেদের অংশ।'
জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকের লোগো। ছবি: সংগ্রহীত
তবে মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ অস্বীকার করছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিশ্ববাজারে চীনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ধ্বংস করতেই এমন পাঁয়তারা করছে বাইডেন সরকার।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র কখনোই টিকটককে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। তারপরেও তারা সবসময় প্রতিষ্ঠানটিকে দমাতে চেয়েছে। টিকটকের স্বাভাবিক ব্যবসাকে বাধাগ্রস্ত করতেই হীন কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।'
প্রতিনিধি পরিষদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ঝরেছে তরুণদের কণ্ঠে। অনেক মার্কিনির অর্থ উপার্জনের প্রধান উৎস হওয়ায় টিকটককে দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করা বোকামি হবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
স্থানীয় একজন যুকব বলেন, 'আমার মতে এটি অন্যায়। অনেকেরই মতে, টিকটক ক্ষতিকারক। কিন্তু এমন দাবি কখনোই সত্যি মনে হয়নি। এই অ্যাপটি জীবন পরিবর্তন করে দেয়। শুধু ৫০ লাখ মার্কিনিই অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবসা করছে না, ১৭ কোটি জনগণ টিকটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানসিক সুস্থতার জন্যেও টিকটক সহায়ক।'
তবে বিশ্লেষকদের দাবি, টিকটকের চেয়ে মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ফেসবুক। তবে শুধুমাত্র চীনা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় হয়রানির মুখে টিকটক কর্তৃপক্ষ।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ক্যাসি ফিসলার বলেন, 'টিকটকের উপকারিতা কী, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হতে দেখছি না। এমনকি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ঝুঁকিগুলো কমানোর বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ নেই।'
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যাতে ভোট দিবেন রেকর্ড সংখ্যক তরুণ ভোটার। নির্বাচনের আগে টিকটক নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া জো বাইডেনের জন্য হীতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।