মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির নতুন ছক তৈরি করছেন ট্রাম্প!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
0

নেতানিয়াহুকে পাশ কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির নতুন ছক তৈরি করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কূটনৈতিক মানচিত্রই যেন স্পষ্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, গাজা এবং ইরানের বিষয়ে নেতানিয়াহুর অটল অবস্থান ফাটল ধরাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে ঘনিষ্ঠতম দুই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে।

দৃশ্যপটে উপস্থিত না থাকলেও এই এক দৃশ্যেই স্পষ্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর কোণঠাসা অবস্থা। সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতা আহমেদ আল-শারা, যাকে পশ্চিমা পোশাকে আল-কায়েদার সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে ইসরাইল; তার সাথে চলতি সপ্তাহে হাত মেলান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় রাজধানী রিয়াদে বুধবার শারার সাথে সাক্ষাতের পর তাকে সম্ভাবনাময় ও প্রকৃত নেতা বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী তিন দেশ সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার চারদিনের সফরে দুই লাখ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিকেও ছাপিয়ে গেছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির নতুক ছক।

তিনটি আঞ্চলিক ও দু'টি পশ্চিমা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সুন্নিদের উত্থান স্পষ্ট হয়েছে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে; যে উত্থানে নড়বড়ে হয়ে গেছে শিয়া অধ্যুষিত আঞ্চলিক শক্তি ইরানের কথিত প্রতিরোধের অক্ষ, পেছনে পড়ে গেছে ইরানের প্রতিপক্ষ ইসরাইলও।

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে ব্যর্থতার কারণে ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হয়ে উঠছে কয়েক দশকের মিত্র ইসরাইল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর নেতানিয়াহুর জন্য সতর্কবার্তাই বটে। বার্তা স্পষ্ট। ট্রাম্পের কম আদর্শিক, বেশি ফলনির্ভর মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে অবস্থান হারাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী, হারাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনও।

বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ইসরাইলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পথে নেতানিয়াহুর বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোও যে পছন্দ করছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সেটাই সফরে স্পষ্ট করেছেন তিনি। শুধু গাজায় অস্ত্রবিরতি বারবার প্রত্যাখ্যান করেই নয়; ইরানের সাথে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় আপত্তির কারণেই মার্কিন রাজনীতিকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নেতানিয়াহু।

প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের অটুট সম্পর্কের কথাই এখনও বলে আসছে ওয়াশিংটন। কিন্তু গাজা ও ইরান ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে পর্দার আড়ালে নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে। ছয়টি আঞ্চলিক ও পশ্চিমা সূত্রের মতে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের সম্পর্কে এই ফাটল তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগেই।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে গেল এপ্রিলে ওয়াশিংটনে সফর করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আগ্রহ চমকে দেয় নেতানিয়াহুকে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শুরু হয় তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনা।

পরের কয়েক সপ্তাহে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সাথে ট্রাম্পের অস্ত্রবিরতির ঘোষণা, সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্টের সাথে সৌহার্দ্যের বার্তা এবং পাঁচ দশকের নিষেধাজ্ঞা শিথিল, আর মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরাইলকে উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরে ইতি টানার সাক্ষী হয় বিশ্ব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এতকাল নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন ইসরাইলের ছয়বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এবার রিয়াদ, দোহা আর আবুধাবিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন আঞ্চলিক নেতৃত্ব।

তিন রাজতন্ত্রই ইরান ও আঞ্চলিক ছায়াশক্তি থেকে নিজেদের রক্ষায় ক্রমশ ঝুঁকছে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্রভাণ্ডার, চিপ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দিকে। ধনকুবের ব্যবসায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পারিবারিক ব্যবসার সাথে অনেক সময় দেশের পররাষ্ট্র নীতি গুলিয়ে ফেলেন বলে তাকে দিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন পারস্য উপসাগরীয় নেতারা।

সেজু