আবুধাবি শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল বাহিয়া নামক গ্রামীণ জনপদ। যেখানে নাগরিক জীবনের বাইরেও বাগান, খামার, নার্সারিসহ কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির জীবন-জীবিকা। এদের অধিকাংশই মাসিক বেতনে চাকরি করেন।
পাশাপাশি এই অঞ্চলে নার্সারি শিল্পে বিনিয়োগও করেছেন বহু বাংলাদেশি। কোনো কোনো নার্সারিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা।
এসব নার্সারি শিল্পে জড়িত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন এজেন্টগুলো আমাদের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে রাস্তার পাশের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য চারা রোপন করে থাকে বিভিন্ন মৌসুম অনুযায়ী।’
আরেকজন বলেন, ‘যদি আমাদের দেশ থেকে সরকার আমাদের এখানে সাপ্লাই করে তাহলে, আমরাও দেশের জন্য কিছু করতে পারি।’
শহরের বাইরে আল বাহিয়া, শাহামা, রাহাবা, শামখা, আজবান, সুইহান এলাকাগুলোতে বাগানের সংখ্যা বেশি। একেকটি বাগানে ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের প্রধান কাজ কলম বা কাটিং পদ্ধতি অনুসরণ ও বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা।
গ্রিন হাউজ পদ্ধতিতেও চারা উৎপাদন হয় এসব নার্সারিতে। শিকড় বড় হওয়া পর্যন্ত নিবিড় যত্নে থাকে চারা গাছ। বিক্রয়ের উপযোগী হলে পাত্র পরিবর্তন করে বাজারজাত করা হয়।
আবুধাবির মিনা, আল আইনের বাওয়াদি ও দুবাইয়ের আল ওয়ার্সন মার্কেট চারা বেচাকেনার বড় পাইকারি বাজার। এছাড়া স্থানীয় খুচরা বাজারেও বিক্রি হয় এসব নার্সারিতে উৎপাদিত চারাগাছ।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয়দের থেকে ভাড়া নিয়ে দোকান পরিচালনা করেন তারা। একেকটি খুচরা দোকানের জন্য বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ দিরহাম পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধ করেন। এমন দোকানের সংখ্যাও বহু।
আরেকজন প্রবাসী বলেন, ‘আমরা এখানে বিভিন্ন ধরণের সবজি উৎপাদন করে থাকি। এগুলো যখন বড় হয় তখন আমরা বাজারে সেল করি।’
নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ২০০ প্রজাতির ফুল, ফল ও ভেষজ গাছের চারা বেচাকেনা হয় এখানে। বাগানবিলাস, বেলিসহ মৌসুমি নানা ফুলের যেমন উৎপাদন হচ্ছে তেমনি ফলের মধ্যে আম, ত্বিন, ডালিম ও সফেদার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে চারা উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকেও আমদানি করা হচ্ছে চারা গাছ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৭০ হাজার দিরহামের চারা আমদানি করে থাকে।
চারা উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন করলে লাভের পরিমাণ বাড়ে। তবে বড় ও ব্যয়বহুল চারাগাছ আমদানি করতে হয়। যে কারণে এই খাতে বাংলাদেশেরও সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।