পেটের গ্যাসের সমস্যার কথা শুনলেই অনেকের মনে অস্বস্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতি, বা পেটের ফাঁপা ভাবের কথা চলে আসে। যাদের এ সমস্যা আছে, সকালে অফিস যাওয়ার আগে বা কোনো অনুষ্ঠানের মাঝে এ সমস্যা দেখা দিলে কতটা ঝামেলায় পড়তে হয়, তা তারা হাড়ে হাড়ে জানে।
গ্যাসের সমস্যার কারণ
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো—
খাদ্যাভ্যাসের কারণ
কম আঁশযুক্ত খাবার: ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্যের মতো পর্যাপ্ত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না খেলে হজমের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
মশলাদার খাবার: মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার পেটের আস্তরণে জ্বালাতন করতে পারে। এতে বদহজম বা অ্যাসিড রিফ্লেক্স হয়।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: অনেকের শরীরে ল্যাকটোজ হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের ঘাটতি থাকে। ফলে দুধ বা পনির জাতীয় খাবার খেলে তা অন্ত্রে গিয়ে ফারমেন্ট হতে শুরু করে, যার ফলে গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয়।
মানসিক কারণ: মনস্তাত্ত্বিক চাপ হজমকে প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে পেটে অস্বস্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয় বা অন্ত্রের অভ্যাসের পরিবর্তন।
লাইফস্টাইলের কারণে
শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব বা প্রধানত বসে থাকা জীবনযাত্রার জন্য হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে। যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় অবদান রাখে। এছাড়া ধূমপান এবং অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন করার অভ্যাসগুলো পেটের আস্তরণে জ্বালাতন করতে পারে। এতে গ্যাস্ট্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আলসার, এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও বৃদ্ধি করে।
অন্যান্য কারণ
বয়স্কদের হজমের কার্যকারিতার পরিবর্তন এবং অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার উচ্চতর প্রবণতার কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য বেশি প্রবণ হতে পারে। এছাড়া জিনগত কারণে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো অবস্থার পারিবারিক ইতিহাস গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ
এ সমস্যা হলে অত্যন্ত অস্বস্তি হয়। শরীরে নানা রকম লক্ষণ দেখা দেয়। গ্যাসের সমস্যা হয়েছে কি না তা বোঝার জন্য কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো— পেট ফুলে যাওয়া, পেট ভারি লাগা, পেটে বা পিঠে ব্যথা হওয়া, ঢেঁকুর ওঠা বা বদহজম হওয়া। এছাড়া বুকে বা পেটে জ্বালাপোড়া করা, হেঁচকি ওঠা ও ক্ষুধা কমে যাওয়া।
গ্যাসের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার
এ সমস্যা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলে ঘরোয়াভাবেই প্রতিকার করা সম্ভব। খাদ্যাভ্যাস সঠিক হলে গ্যাসের সমস্যা হয় না। তবে যদি কোনো কারণে এ সমস্যা হয়েই যায় সেক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে তার প্রতিকার করা সম্ভব।
হালকা ব্যায়াম: নিয়মিত হাঁটা বা যোগব্যায়াম করলে হজমতন্ত্রে রক্ত প্রবাহ বাড়ে। যা তৈরি হওয়া গ্যাস বের হতে সাহায্য করে।
গরম সেঁক: গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করে পেটে ধরলে পেশি শিথিল হয়। যা গ্যাস বের হতে সাহায্য করে।
টক দই: টক দই খেলে হজমের গোলমাল কমে এবং গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কলা: কলা পেটে মৃদু এবং পেটের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। যা অম্বল এবং বদহজম থেকে মুক্তি দেয়।
লবঙ্গ: লবঙ্গ গরম জলে ফুটিয়ে পান করলে বা চিবিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যার উপকার পাওয়া যায়।
মৌরি: মৌরি ভেজানো পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমতে পারে।
আদা চা: আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের গ্যাস দ্রুত বের হতে সাহায্য করে।
পুদিনা পাতা: পুদিনা চা বা পাতা চিবিয়ে খাওয়া অন্ত্রের পেশি শিথিল করে ও গ্যাস নির্গমনে সহায়তা করে। এছাড়া এটি পেট ফাঁপা ও বমিভাব কমাতেও কার্যকর।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাস: মশলাদার, চর্বিযুক্ত ও পোড়া তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
পানীয়: কফি, চা, কার্বনেটেড পানীয় এবং অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
খাবারের পরিমাণ: একসঙ্গে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাবার খেতে হবে।
অন্যান্য: ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া অনেকেই খাবার খাওয়ার পরই শুয়ে পড়ে। তা থেকে বিরত তাকতে হবে।
গ্যাসের সমস্যা কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন
যদি গ্যাসের সমস্যা গুরুতর হয় তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ তে হবে। ডাক্তার গ্যাসের পরিমাণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। এছাড়া নানা ওষুধ বা প্রতিকারের উপায় বরে দেবেন।
তীব্র পেট ব্যথা: যদি পেটের ব্যথা কয়েকদিন ধরে থাকে বা ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে তা স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে এটি গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও আলসার, পিত্তথলির পাথর বা অন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বমি বমি ভাব: গ্যাসের কারণে মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব হতে পারে। তবে ঘন ঘন বমি হলে তা অন্ত্রে বাধা বা ইনফেকশনের কারণে হতে পারে। তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: কোনো ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে গেলে এবং সে সঙ্গে গ্যাসের সমস্যা হলে অন্ত্রের রোগ বা অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বুকজ্বালা বা হার্ট বার্ন: যদি নিয়মিতভাবে বুকজ্বালা হয় এবং তা ওষুধ খেয়েও না কমে তাহলে অ্যাসিড রিফ্লেক্স জাতীয় সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। সেজন্য চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।
অল্প খেলেই পেট ভরা অনুভব: যদি স্বাভাবিক ক্ষুধা অনুভব না হয় বা খুব অল্প খেয়েই পূর্ণতা পেট ভরে যায় এমন অনুভব হয় এবং এর সঙ্গে গ্যাস জমা অনুভূত হয় তবে এটি পেটের ভেতরের চাপ বা টিউমারের মতো বিষয়েও ইঙ্গিত করতে পারে। সেজন্য এমন হলে চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।





