স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে টেকসই উত্তরণের পথে বাংলাদেশ। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসছে, দেশে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে বিতর্কও তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এ সময়সীমা পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর্থিক খাতের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অস্থিরতাও নতুন চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদ, দুর্বল অবকাঠামো, দারিদ্র্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতির কারণে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ এলডিসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। গত পাঁচ দশকে দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন সূচকে এসেছে উন্নতি, দারিদ্র্যের হার কমেছে এবং রফতানি খাতে এসেছে বৈচিত্র্য।
এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের মানদণ্ডে মাথাপিছু আয় ১২৩০ মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৪২৪ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্টের বিপরীতে বাংলাদেশের ৭৩.২। কমেছে ঝুঁকি ও দুর্বলতার সূচক। তাই শর্তগুলো অর্জনের ভিত্তিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ২৮২০ মার্কিন ডলার। মানব সম্পদ সূচকেও বেড়েছে এ হার।
তবে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন, এলডিসি উত্তরণের জন্য যে তথ্য উপাত্ত দেখানো হচ্ছে সেটি ত্রুটিপূর্ণ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দেশে চার বছর ধরে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সংস্থাটির অনুমিত হিসাব, ২০২৫ সালে দারিদ্র্যের হার হতে পারে ২১ শতাংশের কিছু বেশি। দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ।
এই অবস্থায় এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে হুমকির মধ্যে পড়বে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান। নষ্ট হবে চাকরির বাজার— এমন শঙ্কা ব্যবসায়ী নেতাদের।
আরও পড়ুন:
এফবিসিসিআই সংস্কার পরিষদের (লিয়াজু অ্যান্ড মিডিয়া) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হবে, দেশের অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়বে। তার সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রান্তিক জনগণ যেটা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা কিন্তু বেকার হয়ে যাবে। ওষুধ শিল্পে কিন্তু একটা বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। অর্থাৎ যে ওষুধটা আমরা এখন এক টাকা বা দুই টাকায় কিনি সেটার দাম হয়ে যাবে ২৭ থেকে ২৮ টাকা।’
প্রতিটি রপ্তানিযোগ্য শিল্প বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফার্মাসিটিক্যালসে আমরা মেধাস্বত্ব আইনের ক্ষেত্রে বেশকিছু আমাদের নমনীয়তা আছে, সেগুলো চলে যাবে। আমাদের মান্যতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে প্রয়োগ আছে সেগুলো আরও শক্তিশালী হবে। সাবসিডি ইত্যাদি এখন আমরা যেভাবে দিতে পারছি সেভাবে দিতে পারবো না।’
তিনি জানান, এলডিসি থেকে বের হওয়ার সময় বাড়ানো গেলে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন শিল্প মালিকরা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউকে তিন বছর বাড়তি দেবেন বলেছেন তার সঙ্গে যদি আরও তিন বছর যোগ হয়, তাহলে আমাদের প্রস্তুতিটা আমরা ভালোভাবে করতে পারবো যেন আমাদের শূন্য শুল্ক চলে গেলেও উদ্যোক্তারা তাদের ব্যয়টা কমাতে পারেন।’
বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিক বিবেচনায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা দেশগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে জাতিসংঘ। যাকে স্বল্পোন্নত বা এলডিসি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এ শ্রেণিবিন্যাস মূলত বৈশ্বিক নীতি প্রণয়ন, উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য সুবিধা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।





