অনিয়ম-দুর্নীতিতে সংকটে ব্যাংক খাত, স্বাভাবিক হতে লাগতে পারে আরও ১০ বছর: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর | ছবি: এখন টিভি
0

শিগগিরই কাটছে না বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাতের সংকট। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ (শনিবার, ২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত অর্থনৈতিক সামিটে তিনি এ তথ্য জানান। গভর্নর বলেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবেই সংকটে পড়েছে ব্যাংক খাত, যার একমাত্র সমাধান বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা।

গত বছরের পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সংকটে পড়ে দেশের ব্যবসা খাত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ নানা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাড়ানো হয় সুদহারও। যার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ পুরো ব্যবসা খাতে।

ব্যাংকের সুদহার প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশের তুলনায় বেশি হওয়ায় এক বছরের ব্যবধানে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। শনিবার সকালে বণিক বার্তার জাতীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে এমন অভিযোগ করে তারা।

হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এ কে আজাদ বলেন, ‘ইন্টারেস্টের হাইয়ের কারণে কিন্তু প্রাইভেট সেক্টর বড় করতে পারেনি। ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি এ বছর ২৬ শতাংশ কম হয়েছে গত বছরের তুলনায়।’

জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ‘১০ শতাংশের এরকম নীতি সুদ অন্য কোনো দেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। গভর্নর মহোদয়ের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনি যদি নীতি সুদটাকে একটু কমিয়ে দেন, তাহলে বরোইং মানির ওপর সুদ একটু কমবে, আমরা একটু স্বস্তি পাবো।’

অভিযোগের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এর বিকল্প ছিল না। তবে ব্যবসা খাতের সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি স্বাভাবিক করাসহ নানা সুযোগ দিয়ে আসছে। এরপরও যদি কেউ এলসি করতে না পারেন এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী না।’

আরও পড়ুন:

গভর্নর ড. আহসান বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রত্যেকটা রমজানে যেসব আমদানি, সেটা এরই মধ্যে এলসি ওপেনিং হয়ে গেছে এবং এলসি ওপেনিং বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কখনো ২০ শতাংশ, কখনো ৫০, কখনো ১৫ শতাংশ, যা গতবারের করেসপন্ডিং পিরিয়ডের চেয়ে বেশি আছে। আমার ইন্ট্যার‌্যাকশন রেট এখনও ৮ দশমিক ২, তার নিচে গেলেই আমি ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে আনবো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’

তবে ব্যাংক খাতে যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে- তা যে শিগগিরই কাটছে না, তা স্পষ্ট করলেন ড. আহসান এইচ মনসূর। তিনি বললেন, ১০ বছরের আগে মিলছে না স্বস্তি। দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রেখে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এ সমস্যা থেকে উত্তোরণে হয়তো ৫ থেকে ১০ বছর লেগে যাবে আমাদের। আমাদের ব্যাংকিং খাতের যে অবস্থা, সেটার মূলে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজনীতিকরণের একটা বড় ভূমিকা ছিল।’

এসময় ইসলামী ধারার ৫ ব্যাংক নিয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম আগামী সপ্তাহে শুরু করা হবে বলে জানান গভর্নর।

ব্যাংকিংয়ে আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

এসএইচ