দেশের সর্ব উত্তরের স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। যেখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি, ৩৯ কিলোমিটার দূরে নেপালের কাঁকরভিটা। আর ভুটানের ফুন্টসলিং ৭৬ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্তের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার।
ভৌগোলিকভাবে এমন দারুণ সুবিধাজনক স্থানে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। কিন্তু, প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি সম্ভাবনাময় স্থলবন্দরটি। বর্তমানে বন্দরটি বেসরকারি পোর্ট অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় স্থান সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরের সব ট্যারিফ পরিশোধের পরও প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ার অভিযোগ।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'সরকারের ট্যারিফ অনুযায়ী যত চার্জ আছে সব আমরা পরিশোধ করি। কিন্তু সে অনিপাতে আমরা কোনো সেবা পাচ্ছি না।'
বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক রেজাউল করিম রেজা বলেন, 'যারা বিউপিভিসিসি নিয়েছে তরা ডেভেলপমেন্ট করে এ পোর্ট করবে। কিন্তু সাকার এখানে কোনো ডেভেলপমেন্ট করবে তা করতে পারছে না এই মুহূর্তে। এদের চুক্তি যতদিন শেষ হবে না, ততদিন এ পোর্ট বাড়বে না।'
গেলো অর্থবছরে বন্দরটিতে কমেছে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। এমনকি পূরণ হয়নি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি বাণিজ্য কমেছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার। এর সাথে কমেছে রপ্তানির পরিমাণ। আর গেলো অর্থবছরে ৯২ কোটি টাকা ৬৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু সেখানে আদায় হয় ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
বাংলাবান্ধা আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন বলেন, ‘মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যে শিলিগুড়ি শহর। এ কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ অনেক বেশি।’
বাংলাবন্ধ বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই পাথর। এছাড়াও সীমিত পরিসরে চিটাগুড়, প্লাস্টিক দানা, মশুর ডাল ও মেশিনারিজসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি করা হয়। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে ঝুট, গ্লাস, ব্যাটারি ও খাদ্যসামগ্রী। তবে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব পণ্যবাহী গাড়ি বন্দরের বাইরে সড়কের পাশে রাখতে হচ্ছে। তবে, পরিধি বাড়ানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তা।
পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্টের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব ছিল, সরকারের পক্ষ থেকেও এ প্রস্তাব ছিল। সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য আরও চেষ্টা চলছে।’
১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সাথে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ২০১১ সালে ভারত ও ২০১৭ সালে ভুটানে সাথেও শুরু হয় আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। ১০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই স্থলবন্দর জেলার অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এ বন্দরের মাধ্যমে আন্তঃদেশিয় বাণিজ্য বাড়াতে পঞ্চগড়-থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। চার দেশকে রেলপথে যুক্ত করলে বাংলাবান্ধা হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্রে। এছাড়া সড়ক পথেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথেও সংযোগ স্থাপন করতে পারে বাংলাবান্ধা।
চার দেশিয় বাণিজ্যের দারুণ এক সম্ভবনাময়ী স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। শুধু ভারত নেপাল ও ভুটান নয় একটু নজর দিলেই পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসায়িক হাব হয়ে উঠবে এই স্থলবন্দর। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।