আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

বে-টার্মিনাল হলে রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কমবে পরিবহন ব্যয়

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার অর্থায়নকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সংস্থাটির এ ঋণ দিয়ে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্রোতের গতিনিরোধক দেয়াল নির্মাণ ও চ্যানেল ড্রেজিং হবে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বে-টার্মিনাল হলে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ব্যয় কমার পাশাপাশি বাড়বে বিনিয়োগ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালে পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার সাগরতীর ঘেঁষে প্রথম বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। যদিও এক দশকেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল খুব ধীর। এ অবস্থায় বে -টার্মিনালের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো চ্যানেল খনন ও স্রোতরোধী প্রাচীর নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে দ্বার খুলেছে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো নামানোর জন্য চারটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি মাল্টি পারপাস বা বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী টার্মিনাল। দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও চতুর্থটি হবে তেল ও গ্যাস খালাসের টার্মিনাল।

ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা এবং নৌ, রেল ও সড়কপথে সরাসরি সংযোগের কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিন টার্মিনাল অপারেটর এই টার্মিনাল নির্মাণে ইতিমধ্যে চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে ।

কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হলেও চ্যানেল খনন এবং স্রোতরোধী প্রাচীর নির্মাণে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চুক্তি সই হয়নি এখনো। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্রোতরোধী প্রাচীর নির্মাণে বিশ্বব্যাংক সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এবার সেই বাধাও ঘুচলো।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'প্রকল্পটি যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে দেশ তত দ্রুত এর সুফল পাবে। বড় জাহাজ ভিড়তে পারায় আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনের খরচ ও সময় অনেক কমবে। বাড়বে বিনিয়োগ।'

জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে সব সময় জাহাজ ভিড়তে পারে না। চ্যানেলের পানির গভীরতাও কম হওয়ায় সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতা এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে-টার্মিনাল হলে বন্দরে জাহাজ ভিড়তে আর জোয়ার ভাটার অপেক্ষায় থাকতে হবেনা। এখানে চ্যানেলের গভীরতা বেশি হওয়ায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার গভীরতা এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, 'অনেক পুরোনো বন্দর হয়ে গিয়েছে। ১০০ বছরের উপরে এই বন্দর ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন বন্দর নির্মাণ করা আমাদের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে বে-টার্মিনাল দেশের অর্থনীতির জন্য ভূমিকা রাখবে।'

ইতিমধ্যে এই টার্মিনালের জন্য ৫৬৭ একর জমি বুঝে পেয়েছে বন্দর। চলতি বছরেই এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটররা নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বে-টার্মিনাল। প্রস্তাবিত চারটি টার্মিনালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও এডি পোর্টের অর্থায়নে বন্দর মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে। একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ইস্ট কোস্ট গ্রুপ লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, 'সব ধরনের নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখানে সব বিদেশি বিনিয়োগে বন্দর নির্মাণ করা হবে। '

বছরে প্রায় ৫০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করবে বে-টার্মিনাল। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে বে- টার্মিনাল হলে শিপিং কোম্পানি, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারসহ ১০ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।

ইএ