১৯৪০ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম ট্যানারি স্থাপন করেন রণদাপ্রসাদ সাহা। পরবর্তীতে ট্যানারিটি ঢাকার হাজারীবাগে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের পর হাজারীবাগে একে একে গড়ে ওঠে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি ট্যানারি। মূলত এখান থেকেই চামড়া শিল্পের বিস্তৃতি শুরু হয়।
২০১৭ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ এলাকা থেকে স্থানান্তর করা হয় সাভারে নিজস্ব শিল্পনগরীতে। কিন্তু এর ফলে রপ্তানিতে প্রত্যাশিত প্রভাব পড়েনি।
সাভারের একটি চামড়ার গুদাম। ছবি: এখন টিভি
সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর বেশিরভাগ ট্যানারিই এখনও নির্মাণ শেষ হয়নি। যেসব কারখানায় কাজ চলছে, তাদের একটিরও নেই এলডব্লিউজি সনদ। বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে চামড়া শিল্পের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ বা এলডব্লিউজি'র সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ রয়েছে। তাও সে ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে অবস্থিত।
একজন ট্যানারি মালিক বলেন, 'যদি আমরা সনদ পাই তাহলে ইউরোপে আমাদের রপ্তানি বাড়বে। সেখানে মূল্য অনেক বেশি পাওয়া যাবে। আশা করি প্রায় দ্বিগুণ দামে সেখানে বিক্রি করতে পারবো। চীনে আমরা যে দামে চামড়া বিক্রি করি তার চেয়ে দ্বিগুণের উপরে পাব আমরা।'
সাভারের হেমায়েতপুরে পরিকল্পিত চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি নির্মাণ হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর নয়। কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য গড়ে তোলা যায়নি স্থায়ী ভাগাড় বা ডাম্পিং ইয়ার্ড। ফলে দূষণ থাকছেই, যা ট্যানারিগুলোর আন্তর্জাতিক মান সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এতে রপ্তানির সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।
এলোমেলোভাবে পড়ে আছে চামড়ার বর্জ্য। ছবি: এখন টিভি
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, 'একটা জিনিস নতুন করে তৈরি করলে তা ভালোভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে। কিন্তু আমরা তা পারছি না। নতুন জিনিস তৈরি করা অনেকটা সহজ। আমরা সেখানে পিছিয়ে ছিলাম। এখন আমরা সেখান থেকে অনেকটাই উত্তরণ ঘটিয়েছি।'
আরও পড়ুন: চামড়া শিল্প থেকে আয় বাড়াতে চায় সরকার
এদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক মানের সনদ পেতে হলে ট্যানারিগুলোকে দূষণমুক্তভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে হবে। পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, 'আমাদের কাজ হচ্ছে মান নির্ধারণ করা যে এটা হচ্ছে আমার স্ট্যান্ডার্ড। এরমধ্যেই সবাইকে থাকতে হবে। তবে সেটি কার্যকর করবে আমাদের শিল্প মন্ত্রণালয়। অনেকে বলে এটা পরিবেশের বিষয়। কার্যকর করার বিষয় তো শুধু আমাদের এককভাবে না।'
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-র তথ্য বলছে, এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হারাচ্ছে দেশ। শিগগিরই সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর কয়েকটি ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পাবে বলেও আশা সংগঠনটির।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, 'আমাদের যে ট্যানারিগুলো আছে এরমধ্যে ১০টি ট্যানারি চাওয়ামাত্র সার্টিফিকেট পেতে পারে। যদি সিইটিপি সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক মানটা তৈরি করতে পারে।'
চামড়া কারখানায় মেশিনে প্রসেসিং করা হচ্ছে চামড়া। ছবি: এখন টিভি
এদিকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দু'টি চামড়া শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। তবে সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর সমস্যা পুরোপুরি সমাধান না করে অন্য জায়গায় শিল্পনগরী না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলএফএমইএবি প্রধান নির্বাহী জয়নাল আবেদীন বলেন, 'এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আবার একটু চিন্তা করা দরকার। কারণ যা আছে তাকেই আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। সেখানে আবার হঠাৎ করে ২ থেকে ৩টি প্রকল্প হাতে নিলে তা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে সে বিষয়ে আমি আশাবাদী না।'
২০২৫ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় স্থান পাবে বাংলাদেশ এমনটাই প্রত্যাশা খাত সংশ্লিষ্টদের।