আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

চামড়া শিল্প থেকে আয় বাড়াতে চায় সরকার

রপ্তানি আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের পর এবার চামড়া শিল্পকে বিশেষ সুবিধা দিতে চায় সরকার। তবে দেশের বেশিরভাগ ট্যানারির আন্তর্জাতিক মান সনদ নেই। যে কারণে এই খাত থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী রপ্তানি আয় বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। সুনির্দিষ্টভাবে বললে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত চামড়া শিল্প। অবস্থানে দ্বিতীয় হলেও রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে এই খাত।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ৫২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৬৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়েছে চামড়া রপ্তানিতে।

রপ্তানি বাড়াতে সরকার এবার তৈরি পোশাকের মতো সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেক্ষেত্রে চামড়া শিল্পের ওপর নজর সবার আগে। কিন্তু সমন্বিত পদক্ষেপ কিংবা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবে তেমন বিকশিত হয়নি এই শিল্প। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘সিইটিপিতে একটা ব্যর্থতা হয়েছে। সেখানে কিছুটা দুর্নীতিও হয়েছিল। যেভাবে করার কথা ছিল তারা সেভাবে করেনি। আমরা এখন একটা পজিশনে আছি। সেজন্য এখন আমরা এখানে প্রণোদনা দিতে চাই।’

চামড়া শিল্পকে তৈরি পোশাকের মতো সুবিধা দিতে সরকারি ঘোষণায় খুশি এ শিল্পের সাথে জড়িতরা। তারা বলছেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। এজন্য চামড়া শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ-এলডব্লিউজি'র সার্টিফিকেট পেতে হবে চামড়া শিল্প নগরীর অধিকাংশ ট্যানারিগুলোকে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে একটা পরিবেশ সার্টিফিকেট পেতে গেলে দুই থেকে তিন মাস সময় লেগে যায়। অনেক ট্যানারি সার্টিফিকেট আবেদন এখনও পেন্ডিং আছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে তারা এখনও এগুলোর ছাড়পত্র পাচ্ছে না।’

সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর ত্রুটিপূর্ণ প্রধান বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি'র কারণে প্রতিনিয়তই ভুগতে হচ্ছে ট্যানারি মালিকদের। পরিবেশ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে মানদণ্ডে পরিবেশবান্ধব সনদ দেয়া হয় সেই লক্ষ্য অর্জনে বরাবরই শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়েছে ট্যানারিগুলো। তাই এলডব্লিউজি'র সনদ না পেলে বা রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু করার নেই তাদের।

পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বারবার তারা অঙ্গীকার করে কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি। আশেপাশে নদী দূষণের মাত্রা দেখতে গেলে তা পুরো ঢাকা শহরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে একটা পর্যায়ে সেখানে টিকে থাকা যাবে না।’

চামড়া রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। মূলত এলডব্লিউজি'র সনদ না থাকাই এর মূল কারণ। বর্তমানে শুধুমাত্র চীনেই চামড়া রপ্তানি করতে পারছে বাংলাদেশ। এভাবে চলতে থাকলে চামড়া শিল্পে দেশ আরো পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এসএস