প্রবাস
অর্থনীতি
0

অভিবাসন ব্যয় কমাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার আহ্বান প্রবাসীদের

কাজের সন্ধানে প্রতিবছর দেশ ছাড়ছেন লাখো বাংলাদেশি। মধ্যপ্রাচ্যের পথ ধরতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। ভিসার হাত বদলের কারণে এই ব্যয় বাড়তে থাকে ক্রমান্বয়ে। এতে করে অনেক কর্মীর এই খরচ তুলতে লেগে যায় কয়েকবছর। তাই বিদেশে কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছেন প্রবাসীরা।

প্রতিবছর কর্মসংস্থানের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি। গেল এক বছরে এই তালিকায় যোগ হয়েছে দশ লাখের বেশি কর্মী। এর মধ্যে গন্তব্যের তালিকায় শীর্ষে ছিল সৌদি আরব। পরবর্তীতে রয়েছে মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের নাম।

বিদেশ যাত্রায় এসব কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় শুরু হয় পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরপর ভিসা প্রসেসিং, বিমান ভাড়া, বিএমইটির প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা মিলে খরচের খাত দীর্ঘ হতে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটি দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকায়। যদিও একসময় এই ব্যয় ছিল হাতের নাগালে, মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে।

আল মানামা বিজনেসম্যান সার্ভিস বিজনেস কনসালট্যান্ট কামাল হোসাইন খান সুমন বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগী একটি শ্রেণি রয়েছে। এরা ভিসা কেনা-বেচা করে। তারা অরিজিনাল খরচের সঙ্গে আরো অর্থ যোগ করে ভিসার মূল্য দ্বিগুণ করে ফেলে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা সিরাজুল ইসলাম নওয়াব বলেন, ‘ বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে আসতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এখানে চাকরি পাওয়া কষ্টের আর চাকরি পাইলেও তা যথেষ্ট নয়।’

জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো বলছে, ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন ব্যয় বেশি। এর সাথে গন্তব্য দেশের বাংলাদেশি কর্মী, কর্মীর আত্মীয়-স্বজন, নিয়োগকর্তা, রিক্রুটিং এজেন্সি এবং সর্বোপরি মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র এতে জড়িত থাকায় অভিবাসন ব্যয় আরও বেড়ে যায়। বাড়তি চাপ হিসেবে যুক্ত হয় বিমান ভাড়া।

প্রবাসীরা বলছেন, ভিসার হাত বদলের কারণে অভিবাসন প্রত্যাশীদের খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে বাংলাদেশ মিশনের দাবি, আমিরাতের শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মীদের সব ধরনের খরচ বহনের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিবাসন কনসালটেন্ট মীর কামাল বলেন, ‘মূলত দুবাইতে ভিসা বিক্রি করা বা ভিসা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শ্রমিকের ভিসার দরকার হলে তাকে ফ্রিতে ভিসা দেয়ার আইন রয়েছে। ভিসার জন্য কোনো অর্থ নেয়া তা আমিরাতের আইনের পরিপন্থি।’

অন্যদিকে, সরকারিভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে আবুধাবিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আশ-পাশের দেশগুলো যারা মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠাচ্ছে। তাদের খরচ তুলনামূলক কম এটা কীভাবে করতে সক্ষম হচ্ছে সেটা আমরা তাদের থেকে শিখতে পারি।’

অভিবাসন ব্যয়ের চাপ অনেক সময় প্রভাব ফেলে মানসিক স্বাস্থ্যে। অনেক কর্মীর এই খরচ তুলতে লেগে যায় তিন থেকে চার বছর। তাই বিদেশে কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছেন প্রবাসীরা।

এএম