আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের কারণে আস্থা হারায় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। নানা সংকটে অন্যান্য দেশ তাদের মুদ্রার মান কমালেও ধরে রাখা হয় টাকার দাম। এ কারণে বেশি দামের আসায় রেমিট্যান্স চলে যায় সে খাতে। এতে টান ধরতে শুরু করে রিজার্ভে।
পরে ডলার ও রিজার্ভ সংকট কাটাতে ঋণ নেয়া হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে। আর এজন্য ডলার মূল্য বৃদ্ধিসহ মানতে হয় বেশকিছু শর্ত। তাই বাধ্য হয়েই বাড়ে ব্যাংক খাতে ডলারের দাম। সাথে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়া হয় প্রবাসীদের। এতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় রেমিট্যান্স আয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একের পর এক সিদ্ধান্তে ২০২৩ এর শেষের দিক থেকে রেমিট্যান্স প্রায় ২০০ কোটি ডলার আসতে শুরু করে। কিন্তু সেই প্রবাহ জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে মুখ থুবড়ে পড়ে। ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘোষণা দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে প্রবাসীরা। এতে জুলাই আগস্ট মাসে এ আয় অনেকটাই কমে যায়।
পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে নতুন সরকারের সহায়তায় ব্যাংকিং খাতে বাড়ে রেমিট্যান্স আয়। আর বিমানবন্দরসহ সব জায়গায় বিশেষ সুবিধা চালু করা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার নতুন রেকর্ড গড়ল রেমিট্যান্স। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে এ আয় এসেছে ২.৬৪ বিলিয়ন বা ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত ছয় বছরের মধ্যে মাস হিসাবে এটি সর্বোচ্চ আয়।
এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি ২৬০ কোটি বা ২.৬০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। কভিডের কারণে তখন হুন্ডি চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বছরভিত্তিক হিসাবেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০২৪ সালে। গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার। আগের বছর ছিল প্রায় ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। এ হিসাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯৭ কোটি ডলার, যা ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সব অনিয়ম ও দুর্নীতি আগামীতে বন্ধ করে এবং অপরাধকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে রেমিট্যান্স আয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা সকলের।