ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'গত পাঁচ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা এখনো জনসাধারণের সামনে পুরোপুরি উপস্থাপন হয়নি। যা জনমানুষের সামনে আনতে হবে।'
আগামী ছয় মাস বর্তমান সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আগামী ছয় মাসে কী কী সংস্কার হবে, সেটার একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। বর্তমান সরকার স্বল্প সময়ের হলেও এ সরকারের আমলে যেসব সিদ্ধান্ত নেবে, সেগুলো সুদূরপ্রসারী হতে হবে।’
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, ‘আগামী ছয় মাসের জন্য একটি মধ্যম পরিকল্পনা নিতে হবে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকলে বিদেশিদের কাছে বিনিয়োগ ও সহায়তার বিষয়ে কথা বলা যাবে না। বর্তমান সরকারের ন্যূনতম একটি দুই বছর মেয়াদি পরিকল্পনা থাকা জরুরি।’
তিনি বলেন, 'বিগত সময়ে উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে দেশে চামচাতন্ত্র থেকে চোর তন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আর্থিক অবস্থা যেখানে আছে সেখান থেকে এলডিসি উত্তরণের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা বা তা স্থগিত করার প্রয়োজন নেই।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বিগত সময়ের আর্থিক খাতে তথ্য উপাত্তে অনেক ঘাটতি রয়েছে। সেটাকে পরিপূর্ণ করতে হবে। তথ্য ঠিক রাখতে একটি তথ্য কমিশন করা প্রয়োজন।'
তিনি বলেন, 'শ্বেতপত্র কমিটির মোট ৬০টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্বেতপত্র গঠন করতে ঢাকার বাইরে সাধারণ মানুষের সাথেও আলোচনা করা হয়েছে। একইসাথে যারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছিলেন, তাদের সাথে সবার আগে আলোচনা করা হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে সবার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হলেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরা হয়নি।'
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, 'শ্বেতপত্র মোট ২৩টি পরিচ্ছেদে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পত্রে আগামী দিনে ৫টি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।' অর্থনীতির সংস্কারে একটি গোষ্ঠী বাধা সৃষ্টি করছে বলেও জানান তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সংস্কারে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে দিতে হবে। অর্থনীতির সংস্কারে একটি গোষ্ঠী এখনও বাধা সৃষ্টি করছে।'
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিষয়ে তিনি বলেন, 'এনবিআর যে টিন নাম্বার থাকার দাবি করে, তা সঠিক কার্যকরী হিসাব না। কর পদ্ধতিতে অটোমেশন করা গেলে জিডিপি অনুযায়ী এ হার অনেক বেড়ে যাবে।'
অভিবাসন খাতেও অনিয়ম রয়েছে জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, 'অভিবাসন খাতে সাতটি অনিয়ম ও চ্যালেঞ্জ পাওয়া গেছে। সরকারি বিনিয়োগের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। ব্যক্তিখাতসহ অনেক বিনিয়োগ নিয়ম-কানুনের মধ্যে ফেলে ক্ষতি করা হয়েছে। বর্তমানে আর্থিক খাতের যে অবস্থা তাতে দু'দিন কাজ না করলেই একজন দরিদ্র সীমার নিচে চলে আসবে। দারিদ্র্য বিমোচনের যে ব্যবস্থা তা অনেকটা টোকা দিলে পড়ে যাওয়ার মতো। দেশের শীর্ষ শ্রেণির ১০ ভাগ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদের মালিক।'
বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাধ্যমে যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা এখন থেকে কয় প্রজন্ম ধরে শোধ করতে হবে তা বলা মুশকিল। ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পে পাঁচ কোটি টাকা চুরি করার মত দুর্নীতি হয়েছে। মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে ঝুঁকিতে আছে দেশ।'