দেশে এখন
0

চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি চালুর মাধ্যমে খুলবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার

চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সমুদ্র যাত্রায় ফেরি চলাচল। এরই মধ্যে উভয় প্রান্তে পুরোদমে শুরু হয়েছে ফেরি নির্মাণ, ড্রেজিং, জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। এতে যাত্রাপথে শত বছরের দুর্ভোগ-লাঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন সন্দ্বীপবাসী। নতুন এই সার্ভিস চালু হলে সন্দ্বীপের কৃষি, অর্থনীতি ও পর্যটন বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট। শত শত কেজি ওজনের মালামাল নিয়ে শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এই ঘাটে প্রতিদিন আসেন ৪ থেকে ৬ হাজার সন্দ্বীপবাসী। ২০ কিলোমিটার সমুদ্র যাত্রায় এখান থেকেই দুর্ভোগের শুরু। রোদ-বৃষ্টিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাটতে হয় টিকিট। মালামাল নিয়ে ঠেলতে হয় ভ্যানগাড়ি। কাদা মাড়িয়ে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ভেঙে উঠতে হয় নৌযানে।

ঘাট থেকে লাল বোট, স্পিড বোট, মালামালের কাঠের ট্রলার ও জাহাজসহ অন্তত ধরনের নৌযান চলাচল করে। সবগুলো জলযানের নিয়ন্ত্রণ এক মালিকের হাতে। এতে ইচ্ছে মতো ভাড়া নেয়ায় বাড়ে দুর্ভোগ। নৌযান চলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এরপর রাত নামলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দ্বীপটি। এই অবস্থা চলে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকেই।

সম্প্রতি সন্দীপকে নৌবন্দর ঘোষণার পর ঘাটটি জেলা পরিষদ থেকে নিয়ন্ত্রণে নেয় বিআইডব্লিউটিএ। শুরু হয় নতুন দিগন্তের সন্ধান।

বাঁশবাড়িয়াা সমুদ্র সৈকত। এতকাল পরিচিত ছিল স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে। সব ঠিক থাকলে নতুন বছরে সন্দীপবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত ফেরি যাত্রার শুরু হবে এখান থেকেই।

এরই মধ্যে সন্দীপের গাছুয়া ও সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া প্রান্তে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চলছে সমুদ্র থেকে ৮০০ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ। নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ, গাড়ি পার্কিং এরিয়া, টার্মিনাল ও জেটি তৈরি। এছাড়া সাগরে যেখানে ফেরি থামবে সেখানে চলছে ড্রেজিং ও ব্লক ফেলার কাজও।

বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ওখানে ফেরি চলাচলের কাজ শুরু হয়ে গেছে আর ড্রেজিং কার্যক্রম হচ্ছে যাতে নৌপথ সচল রাখা যায়। এছাড়া যাত্রীদের আধুনিক সুবিধা দেয়ার জন্য আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন টয়লেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে এবং টার্মিনাল প্রস্তুত করা হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ফেরি চলাচল শুরু হলে পণ্যবাহী ট্রাক, মিনিবাস, ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে যাওয়া যাবে সন্দ্বীপে। ঘাটগুলোতে চাইলে যে কেউ নৌযান সার্ভিস শুরু করতে পারবে। এমন ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন নতুন উদ্যোক্তাও। একই সঙ্গে ফেরি পারাপার সুবিধায় আবেদন করা হয়েছে চট্টগ্রাম-সন্দীপের নতুন বাস রুটেরও।

সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসের উদ্যোক্তা জসিম উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, ‘সন্দীপের চারদিকে মানুষ ট্যুর দেবে। আমরা একদিন বা দুইদিন প্যাকেজের মাধ্যমে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রাখব। ক্যাম্পিং ও ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থাও থাকবে, এমন বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আমাদের চাওয়া থাকবে সন্দীপে গেলে মানুষ যেন নিরাপত্তাহীনতা বা কোনো প্রকার হয়রানির শিকার যেন হতে না হয়।’

গবেষকরা বলছেন, ফেরি সার্ভিস শুরু হলে সন্দ্বীপের কৃষি, মৎসসহ অর্থনীতি, বাণিজ্য ও স্বাস্থ্যখাতে আসবে নতুন গতি। এছাড়া পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজানো যাবে দ্বীপের সমুদ্র উপকূলকে। তবে, পুরো সুবিধা পেতে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও।

চবির সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোসলিম উদ্দিন মুন্না বলেন, ‘এখানে যেহেতু ওয়েভ, টাইড, কারেন্ট, সেডিমেনটেশন আছে। তবে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হচ্ছে কিন্তু পলি অন্যটি হচ্ছে ওয়েভ। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতি বছর ১ থেকে ২ বার ড্রেজিং করতে হবে আর সেখানে সার্বক্ষণিক সেখানে ২ টা ড্রেজার রাখতে হবে মেনটেন্যান্স ড্রেজিং করার জন্য। ’

উত্তাল বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে সক্ষম এমন ফেরিই এ রুটের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এতে যাত্রা ব্যয়ও কমবে বলে আশা তাদের।

এএম