গত কয়েক বছরে ঈদের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য দেশে কিংবা দেশের বাইরে বাড়ছে ভ্রমণের প্রবণতা। প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পায় দেশের পর্যটন খাত। বাড়তি আয়োজন থাকে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। ট্রাভেল এজেন্টরাও সাজায় নিত্যনতুন ট্যুর প্যাকেজ।
বরাবরের মতো এ বছরও ভ্রমণ পিপাসুদের চাপ থাকবে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলোতে। দেশিয় পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট। সাথে পদ্মা সেতুর জন্য কুয়াকাটা আর সুন্দরবনেও চাপ থাকবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি।
তবে ভিন্ন চিত্র বিদেশ যাত্রায়। ডলার সংকট আর বিমান টিকিটের দাম বাড়ায় এবার বিদেশের প্যাকেজগুলোতে খরচ বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। তাই ছুটি কাটাতে বিদেশ যাত্রা গত বছরের তুলনায় নামতে পারে অর্ধেকে। বিদেশ যাওয়া যাত্রীদের পছন্দ ভারতের কলকাতা, শিমলা, মানালিসহ নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ আর থাইল্যান্ড।
গ্রোরি হলিডেজের সিইও মো.আনোয়ার হোসাইন বলেন, 'যে প্যাকেজগুলো আমরা ৪ রাত ৫ দিনের বিক্রি করতাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার ভিতরে তা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার ভিতরে। এখানে দেখা যায় আমাদের ৩০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। সেজন্য যারা সাধারণ টুরিস্ট আছ, যাদের বড় একটি চাপ ছিল বাইরে যাবার তাদের সংখ্যা সমান'
ঈদ ঘিরে বাড়তি চাপ থাকে দেশের আকাশপথে। অতিরিক্ত চাপ সামালাতে ১৮ টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল রুটে চলবে এই ফ্লাইটগুলো। বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রাও পহেলা এপ্রিল থেকে সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন ৪টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে এওনো অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার।
বিমান বাংলাদেশ বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, 'যে সব রুটে আমাদের তি বা চারদিন ফ্লাইট আছে সেসব রুটে ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে রড় এয়ারক্রাফট দেয়া হয় সেক্ষেত্রে ফ্লাইট বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না।'
বিদেশযাত্রা কম হওয়াকে দেশের পর্যটনের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাড়াতে হবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব বলেন, 'বাইরে যাওয়ার চেয়ে দেশের ভিতরে ঘুরতে ডাওয়ার যে প্রবণতা তা বেড়েছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি শুভ বার্তা। এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষ ঘরের ভিতরে ঘুরছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে এটি একটি ভূমিকা রাখবে।'
এবার ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পর্যটন, আকাশ ও সড়কপথে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যবসার আশা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো. জিয়াউল হক হাওরাদার বলেন, 'কক্সবাজারে পর্যটকরা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুবিধার্থে দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।'
দেশে বছরে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে। যার ১৫ লাখ এই ঈদে ভ্রমণ করবেন। যা গতবারের তুলনায় দেড় গুণ বেশি।