দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পঞ্চগড়। জেলাটির তিনদিকে ভারত। কাছেই নেপাল ও ভুটান। দেশের একমাত্র চতুর্দেশিয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধার অবস্থানও জেলাটিতে।
ভৌগোলিকভাবে ও কৌশলগত দিক থেকে গুরত্বপূর্ণ এবং পর্যটন সম্ভাবনাময় হলেও জেলাটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেশ পিছিয়ে। জেলার বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবায় ভরসা ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল ও কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু সেসবেও আছে লোকবল ও আধুনিক সরঞ্জামের সংকট। এতে ন্যূনতম চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেলে। যা মুমূর্ষু রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২০২৩ সালে দাড়িয়াপাড়ায় চীন-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে এক হাজার শয্যার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির নির্মাণকাজও শুরু হয়। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে বন্ধ হয়ে যায় আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্পটির সকল কার্যক্রম। অলস পড়ে আছে ৩২ একর জায়গা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'রোগীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রংপুরে পাঠিয়ে দেয়। বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। তখন একটা হয়রানির শিকার হতে হয়।'
অন্য একজন বলেন, 'পঞ্চগড়ের মানুষ তো স্বল্পআয়ের মানুষ। আমরা তো ভারত বা ঢাকা, রংপুরে গিয়ে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা করবে এটা তো সম্ভব না।'
অন্য একজন বলেন, 'পঞ্চগড়ে চিকিৎসা হোক এরকম একটা মেডিকেল আমরা চাচ্ছি। এই মেডিকেল হলে আমাদের এলাকার লোকজন লাভবান হবে।'
চীনের অর্থায়নে উত্তরাঞ্চলে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় ফের আশায় বুক বাঁধছেন জেলার প্রায় ১২ লাখ বাসিন্দা। হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সর্বস্তরের মানুষ। তুলে ধরা হচ্ছে দাবির যৌক্তিকতা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'চীনের যে রাষ্ট্রদূত ছিল উনি উদ্বোধন করে গেছেন। কিন্তু কী কারণে জানি না তারপর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলো।'
জেলা প্রশাসন বলছে, এক হাজার শয্যার হাসপাতাল করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। সাথে নর্থ পয়েন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩২ একর জমি দিতেও প্রস্তুত তারা।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, 'একজন চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের একজন উদ্যোক্তার সাথে কোলাবোরেট করে একটি বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। আমি এরইমধ্যে তাদের সাথে কথা বলেছি, তারাও বলেছে যদি এই জায়গায় স্থাপন গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাতেও তাদের কোনো আপত্তি নেই।'
রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর দিনাজপুর ও নীলফামারীতে রয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পঞ্চগড়ে চীনের অর্থায়নে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি স্থাপিত হলে শুধু উত্তরাঞ্চল নয় নেপাল ভূটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও এর সুযোগ সুবিধা পাবে। নিশ্চিত হবে প্রান্তিক জনপদের স্বাস্থ্যসেবা।