'ভাষা না শেখায় বিদেশে কর্মী পাঠানো যাচ্ছে কম'

0

প্রবাসের চাকরিতে দিন দিন বাড়ছে ভাষার গুরুত্ব। সেজন্য দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীনসহ বেশকিছু দেশের ভাষা শেখার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে দেশে। এতে অনেকের আগ্রহ থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় বিদেশে কর্মী পাঠানো যাচ্ছে কম।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। প্রবাসে যাওয়ার জন্য কারিগরি দক্ষতাসহ যেসব যোগ্যতার দরকার পড়ে, তারমধ্যে অন্যতম ভাষাজ্ঞান। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপানসহ বেশকিছু দেশে যাওয়ার জন্য এখন ভাষাগত যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর ফার্মগেটে ছোট বড় মিলে প্রায় শতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে, যারা প্রায় সব দেশের ভাষা শেখান। কিন্তু চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা বেশি থাকায় দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতেই আগ্রহী অধিকাংশ মানুষ। তিন মাস মেয়াদী এসব কোচিংয়ের কোর্স ফি প্রায় ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা।

কোচিংয়ের একজন শিক্ষক বলেন, 'পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমরা কোর্স কমপ্লিট করি। প্রথমে আমরা তিন মাসের কোর্স করিয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা নিতাম। এখন সেটাই ছয় মাসে পরিবর্তন করে দিয়েছি।'

|undefined

দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত মো. ইফতেখার, এখন কোরিয়ান ভাষা শেখান। ছবি: এখন টিভি

আবার অনেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাস যাপন করে দেশে ফিরে শেখানো শুরু করেছেন ভাষা। তেমনই একজন হলেন মো. ইফতেখার। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে তার কোচিং সেন্টারে আবাসিক, অনাবাসিক কিংবা অনলাইন মিলে শিক্ষার্থী সংখ্যা হাজারের বেশি। এখানে কোচিং ফি ১২ হাজার টাকা। তবে, অনলাইনে শিখতে গুণতে হয় কিছুটা কম। তিনি বলেন, 'কোরিয়ান ভাষা পার্ট-১ ও ২ এর উপরে আমাদের পরীক্ষা হয়। লিসেনিং এবং রিডিং এর উপরে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।'

দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরেও জাপান, ফ্রান্স কিংবা চীনা ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহী কম নয়। বেসরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এসব ভাষা শিখিয়ে ভূমিকা রাখছেন জনশক্তি রপ্তানিতে। এর বাইরে সরকারি ১০৪ টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজে (টিটিসি) দেয়া হয় ভাষা প্রশিক্ষণ।

রাজধানীর বাংলাদেশ জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মূলত ইংরেজি ছাড়াও কোরিয়া, জাপান, চীনের ভাষা শিখিয়ে বিদেশ পাঠাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থীরা জানালেন, সরকারিতে সুযোগ পেতে তাদের দিতে হয়েছে পরীক্ষা। শিক্ষার্থী কম থাকায় তারা মানসম্মতভাবে শিখতে পারছেন ভাষা।

অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানে আই এম জাপান প্রকল্পের অধীনে যাওয়া যাচ্ছে জাপান। তবে এর জন্য কোন টাকা না লাগলেও জাপানিজ ভাষা, আচরণ ও সংস্কৃতি শিখতে হয় ভালোভাবে। তাই কয়েকমাস এখানে থেকেই রপ্ত করতে হয় এসব প্রশিক্ষণ।

কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষক সংকট, পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েই তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এতে করে অল্প সংখ্যক লোককে ভাষা প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ-জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ফাউজিয়া বলেন, 'আমাদের এখানে প্রতিব্যাচে ৪০ জনকে ভর্তি নিতে পারি। আমাদের যদি কর্তৃপক্ষ আর একটি ব্যাচ করার সুযোগ দেয় তাহলে আমরা সে পরিকল্পনা করবো।'

২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ১০ হাজার লোক চাইলেও বাংলাদেশ দিতে পেরেছে মাত্র ৪ হাজার ৯৯৬ জন। অন্যদিকে জাপানে কয়েক হাজার লোকের চাহিদা থাকলেও দেয়া গেছে মাত্র ৯৬৭ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীনসহ বড় অংশের সুযোগ আছে আফ্রিকায় লোক পাঠানোর। শুধু ভাষা শিখিয়ে যে পরিমাণ মানুষের প্রবাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না কেবল সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে।

২০২৩ সালে প্রবাসে গেছেন সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ, তারমধ্যে ভাষা শিখে বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজার। অথচ শুধু যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো গেলেই বিদেশে চাকরি পাওয়া যেমন সহজ, তেমনি মিলতে পারে বেশি বেতনও।

এসএস