দিঘী কিংবা পুকুরের জলে জলকেলি, সাঁতার ও দুরন্তপনার এ দৃশ্য একসময়ের নিত্যচিত্র। এখন দেখা মিলে কালে-ভদ্রে। ফেনী শহরে ছিলো দুই শতাধিক পুকুর ও জলাশয়। সময়ের পরিক্রমায় সেখান থেকে অনেকগুলো হারিয়ে গেছে ইট-সিমেন্টের আবাসন আর অবকাঠামোয়।
ফেনীর মিজান ময়দানের পাশে এখন যেখানে মার্কেট দেখা যাচ্ছে, সেখানে এক সময় ছিলো বিশাল জলাশয়। এলাকার মানুষের ব্যবহার থেকে শুর করে অগ্নি নির্বাপণে ভূমিকা রাখতো পুকুরটি। কিন্তু পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই এখন সেখানে তৈরি হয়েছে মার্কেট। পাশের পুকুরটি কোনোভাবে টিকে আছে তার অবস্থাও জরাজীর্ণ। হাসপাতালের বর্জ্যসহ নানা রকমের বিষাক্ত আবর্জনার কারণে পুকুরটির পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত।
স্থানীয়রা জানান, অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এরইমধ্যে আরও চারটি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
বড় বাজার, শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্য কেন্দ্রে একসময় ছিলো বিশাল পুকুর। যা অগ্নি নির্বাপণ, অজু গোসলের পাশাপাশি রান্নাতে ব্যবহারেও ছিলো অন্যতম ভরসা। সেখানেও উঠেছে বিপণি বিতান। অন্যদিকে, শহরতলীর দাউদপুল এলাকায় কৃষি সেচের অন্যতম ভরসা খাঁজা আহম্মদ লেক ভরাট করে করা হয়েছে পৌর সভার মার্কেট। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জলাশয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের একজন বলেন, ‘অনেক বড় একটি লেক পৌরসভা কর্তৃক ভরাট করা হয়েছে। এখন বড় ধরনের অগ্নিনির্বাপণে ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই।’
জলাশয় কমায় সার্বিক উষ্ণায়নসহ বাড়ছে অগ্নি ঝুঁকি। নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর৷ জলাশয় রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। যদিও নানা উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক।
ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সংযুক্তা দাস গুপ্তা বলেন, ‘জলাশয় যদি অনুমোদনবিহীন ভরাট করা হয়, তাহলে নিয়মিত ইনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে জরিমানা ধার্য করা হতে পারে।’
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক জলাধার পাশাপাশি জনকল্যাণে সুপেয় পানি সরবারহের জন্য যেসমস্ত পুকুর বা দীঘি রয়েছে, সেগুলো যেন ভরাট না হয় সে বিষয়ে আমরা সব সময় সোচ্চার থেকেছি। আমাদের প্রচেষ্টা সমস্ত দীঘি এবং জলাধারগুলো যেন বেদখল না হয়।’
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া পুকুর জলাশয়গুলো ফিরিয়ে আনতে না পারলেও যা আছে, সেগুলো রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ চান পরিবেশ সচেতন স্থানীয় মহল।





