হিড বাংলাদেশ, ১৯৭৬ সালে মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জের কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে প্রায় ১৯০ একর জায়গা শর্তসাপেক্ষে লিজ নেয়। উদ্দেশ্য ছিলো চা শ্রমিকসহ দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা। তবে কাগজে কলমে স্বাস্থ্যসেবার কথা থাকলেও বাস্তবে চিকিৎসার কোনো চিহ্ন নেই।
বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবার আড়ালে গড়ে উঠেছে রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ, ছাগল ও মোরগ পালনের খামার, লেবুর বাগান আর মাইক্রো ফাইন্যান্স অফিস। বাহিরে চিকিৎসার সাইনবোর্ড থাকলেও ভেতরে সবই ফাঁকা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের জায়গায় অনুমতি ছাড়া মূল্যবান কয়েকটি গাছ কেটে জড়ো করলে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয়দের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি ও সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জব্দ করা হয় গাছ। স্থানীয়রা বলছেন, গাছ কেটে আসবাবপত্র তৈরি ও বিক্রির প্রমাণও রয়েছে। এমনকি বারবিকিউতেও ব্যবহার করা হয় এসব গাছ।
এলাকাবাসীরা জানান, এখানে একসময়ে স্থানীয় মানুষরা চিকিৎসা নিতো। এখন আর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় না। এছাড়াও এখানে একসময় অনেক গাছ ছিলো। গাছগুলো কাটা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন করা হলে জানানো হয় গাছগুলো ঝড়ে পড়ে গেছে, মারা গেছে।
কমলগঞ্জ রাজকান্দি রেঞ্জ সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘তারা গাছ কেটেছে তবে আমাদের জানায়নি কিছু। বন বিভাগের কাছে কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় কমলগঞ্জ ইউএনওকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
অভিযোগ রয়েছে, শর্ত ভেঙে স্বাস্থ্যবিভাগের জায়গা সাবলিজ দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা কেউ কিছু বললে দেওয়া হয় গাছ কাটার মিথ্যা মামলা। এমনকি খেলার মাঠও বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিলে পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা হয়। আর এসব কাজে হিডের লিয়াজো অফিসার নুরে আলম ছিদ্দিকী সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নানা বিষয়ের এ অভিযোগ স্বীকারও করেন হিড বাংলাদেশের লিয়াজো অফিসার।
কমলগঞ্জ হিড বাংলাদেশ লিয়াজো অফিসার মো. নুরে আলম ছিদ্দিকী বলেন, ‘গাছগুলো মৃত অবস্থায় ছিলো। আমাদের মনে হয়েছে বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান বনবিভাগের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে গাছগুলো। তদন্তপূর্বক তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কারও অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার নিয়ম নেই। আমরা তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
হিড বাংলাদেশের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে ও শর্ত ভঙ্গের জন্য তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘কিছু কাজ চুক্তির বাহিরে করা হচ্ছে। সেটি আমরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
হিডের অনিয়ম তদন্ত শেষে জায়গাটি উদ্ধার করে সরকারি স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের দাবি স্থানীয়দের।





