১০ মাসে ৮ যুদ্ধ বন্ধের দাবি ট্রাম্পের, বাস্তব চিত্র আসলে কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: এখন টিভি
0

২০২৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ও সংঘাত উত্তেজনার পারদ যেমন বেড়েছে, তেমনি কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১০ মাসে ৮টি যুদ্ধ বন্ধের দাবিও করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির পর এখন বাস্তব চিত্র আসলে কী?

৪৭ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০২৫ সালের ১০ মাসেই ৮টি যুদ্ধবন্ধের দাবি করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবন্ধে ২৪ ঘণ্টাও সময় লাগবে না বললেও; পুরো ২০২৫ সালেও সেই প্রচেষ্টায় সফল হননি ট্রাম্প।

যুদ্ধবন্ধ ইস্যুতে ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডারও সাক্ষী বিশ্ববাসী। এরপর ১৫ আগস্ট আলাস্কায় হওয়া ট্রাম্প-পুতিনের ঐতিহাসিক বৈঠকেও আলোর মুখ দেখেনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ। নভেম্বরে ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পরে উদ্বেগ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তাবগুলো সংশোধনের ওপর জোর দিয়ে যুদ্ধবন্ধ প্রচেষ্টা এখনও চলমান।

এখন আসা যাক, যেসব যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধে ট্রাম্প নিজের সফলতার দাবি করছেন, বর্তমানে সেসব যুদ্ধ-সংঘাতের বাস্তব চিত্র আসলে কী! এক্ষেত্রে দেখা গেছে, বেশিরভাগ যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তি ইতোমধ্যেই ভেস্তে গেছে। আর নামমাত্র যুদ্ধবিরতি চলমান থাকলেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় থামেনি ইসরাইলি বাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ১০ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রথম ধাপের হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিও প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি গাজা যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব ট্রাম্প একা নিলেও; প্রথম থেকেই মধ্যস্থতায় আছে কাতার, মিশরসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ।

আরও পড়ুন:

অপারেশন রাইজিং লায়ন নামে ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলের ভয়াবহ হামলার পর; ওই দিনই অপারেশন 'ট্রু প্রমিজ থ্রি' নামে তেল আবিবে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এরপর ইসরাইলকে সমর্থনে ২১ জুন অপারেশন মিডনাইট হ্যামার' নামে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ১২ দিনের মাথায় কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর, নতুন করে সংঘাত না হলেও তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের উত্তেজনা রয়েই গেছে।

পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ২৮ জুলাই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত; এরপর ২৬ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় শান্তি চুক্তি করে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া। একমাস না যেতেই বিতর্কিত সীমান্তে কম্বোডিয়া নতুন করে স্থল মাইন পুঁতে রাখায় অভিযোগ তুলে ১১ নভেম্বর শান্তিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় থাইল্যান্ড। এরপর৭ ডিসেম্বর বেশ কয়েকজন সেনা হতাহতের ঘটনায় ৮ ডিসেম্বর কম্বোডিয়ায় বিমান হামলা চালায় থাই সেনারা। ১২ ডিসেম্বর রাতের ফোনালাপে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া ফের যুদ্ধবিরতিতে রাজি বলে দাবি করেন ট্রাম্প। এরপরও ওঠে হামলার অভিযোগ।

এদিকে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে একদিনও টিকেনি কঙ্গো-রুয়ান্ডা যুদ্ধবিরতি। ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতারা শান্তি চুক্তিতে সই করার পরদিনই তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও রুয়ান্ডার এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে।

২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটকের প্রাণহানির জন্য দায়ী করে ৭ মে রাতে অপারেশন সিঁন্দুর নামে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। বুনইয়ান-উন-মারসুস নামে পাল্টা হামলার তীব্রতা বাড়ায় পাকিস্তানও। এরপর ১০মে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বন্ধের বার্তা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর জন্য আজও ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে নারাজ মোদি প্রশাসন। বাস্তবে উত্তেজনা নিরসনে দু'দেশের মধ্যে স্থায়ী কোনো চুক্তিও হয়নি।

এদিকে ট্রম্পের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ চার দশকের সংঘাত অবসানে ৮ আগস্ট হোয়াইট হাউজে একটি শান্তি চুক্তিতে সই করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। আজারবাইজানের নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে ১৯৮০ সালের শেষের দিক থেকে দু দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। অঞ্চলটিতে বসবাস করা বেশিরভাগই জাতিগত আর্মেনীয়ন।

হামাস-ইসরাইল, ইরান-ইসরাইল, ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, কঙ্গো-রুয়ান্ডা,আর্মেনিয়া-আজারবাইজান ছাড়াও কোসোভো-সার্বিয়া এবং মিশর-ইথিওপিয়া যুদ্ধবন্ধের দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ৮টি যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে উচ্চ-শুল্কের হুমকিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে মনে করা হয়। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবন্ধে উচ্চ-শুল্কের হুমকির কথা নিজ মুখে স্বীকারও করেছেন ট্রাম্প। স্থায়ী হোক আর না হোক, শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একের পর এক যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তি সই করিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধ-সংঘাত থামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য গত ৫ ডিসেম্বর প্রথম ফিফা শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ এর ড্র অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার ও অতি প্রশংসায় করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

ইএ