৫০ বছরেও কোটি কোটি ডলার খরচ করেও মাদকের দৌরাত্ম্য থামাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা | ছবি: সংগৃহীত
0

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর ৫০ বছরেও বেশি সময়ে কোটি কোটি ডলার খরচ করেও মাদকদ্রব্যের দৌরাত্ম্য খুব একটা থামাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। বরং আঞ্চলিক সহিংস উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি অতিরিক্ত মাদকসেবনে দেশটিতে বছরে প্রাণ যায় গড়ে এক লাখের বেশি মানুষের। এ অবস্থায় মাদক বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন নিয়ে ওঠেছে প্রশ্ন।

১৯৭১! জনগণের এক নম্বর শত্রু উল্লেখ করে মাদকের বিরুদ্ধে এভাবেই জোর গলায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এরপর ১৯৮০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের অধীনে এই অভিযান তীব্র হয়ে ওঠে। ব্যাপক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে গাঁজা বহনকারীদের জন্যও শাস্তি কঠোর করা হয়েছিলো ১৯৮৪ সালে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয় মেয়াদেও একই পথে হাটছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা ঘিরে বাড়ছে আঞ্চলিক উত্তেজনাও। ওয়াশিংটনে মাদক পাচারের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে ৫ কোটি ডলার পুরস্কারও ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবিয়ান সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে ২০ টির বেশি মার্কিন মাদক বিরোধী অভিযানে প্রাণ গেছে ৮০ জনের বেশি মানুষের। এছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি তল্লাশি অভিযানতো আছেই। এতো কিছুর পরও প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ ভয়াবহ মাদকদ্রব্যের দৌরাত্ম্য থামাতে পারেনি ওয়াশিংটন। ক্যালিফোর্নিয়াসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে ১৯৯০ সাল থেকে বৈধতা পেয়েছে গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য।

আরও পড়ুন:

এ অবস্থায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোটি কোটি ডলার খরচ করে ওয়াশিংটনের অর্জন বা সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পেছনে কারণগুলো কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আল-জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়; বছরের পর বছর ধরে মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করে কেবলে কারাগারে রাখতেই কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছে। কিন্তু মাদক ঘিরে আঞ্চলিক সহিংসতা রোধে নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। যার কারণে ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা।

মাদক বিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করা হলেও; কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পাওয়া পেছনে মাদক বিরোধী আইনকেও দায়ী করা হচ্ছে। ১৯৮৬ সালের আইনে সর্বনিম্ন সাজার বিধান অন্যতম কারণ। যে আওতায় কোকেইনসহ ধরা পড়া ব্যক্তিদের সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী কোকেনের মতেো মাদক বহন ও সেবন করা সত্ত্বেও; ১৯৮৬ সালের মাদক বিরোধী আইন পাস হওয়ার পর শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড দেয়ার হার পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এতে মাদক বিরোধী আইনে দৃশ্যপটে আসে বৈষম্যের উদাহরণ।

কোকেন রাখার জন্য শাস্তির বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ককুলা সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড এথিক্সের গবেষণায়। এমনকি মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা বিনিয়োগ না করায় এখনও নেশাজাত দ্রব্যের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য বলছে, অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক সেবনে দেশটিতে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। যার বেশিরভাগই ফেন্টানিল সেবনকারী। অতিরিক্ত মাদক সেবনে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে ১৮-৪৪ বছর বয়সী মানুষ।

সেজু