ব্রহ্মপুত্র বিধৌত সবুজ-শ্যামল প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহ। ধীরে ধীরে কমছে সবুজ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে ইটপাথরের জঞ্জাল। নিয়ম-নীতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাথা তুলেছে অসংখ্য বহুতল ভবন।
আরও পড়ুন:
বিল্ডিং কোড, সেটব্যাক— কোনো কিছুরই তোয়াক্কা নেই। এসব বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে রয়েছে ঘোরতর অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়েও। নির্মাণ চলাকালেও থাকে না কোনো তদারকি। অভিযোগ আছে, সিটি কর্পোরেশনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ নগরীকে ঠেলে দিয়েছে ভয়াবহ পরিণতির দিকে।
আর এই আতঙ্কের মধ্যেই গত ২১ নভেম্বর ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প নাড়িয়ে দিয়ে গেছে ময়মনসিংহসহ সারা দেশ। ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও বেশি ছড়িয়েছে আতঙ্ক। ফলস্বরূপ, বহুতল ভবনের অনেক বাসিন্দা তুলনামূলক ছোট ভবনে বাসা স্থানান্তরের কথাও ভাবছেন। কিন্তু তাতেই কি মুক্তি মিলবে?
স্থানীয়রা জানান, অনেক বিল্ডিং তৈরি হলেও সেগুলো তৈরিতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, যা সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া বড় দালানগুলোতে থাকা নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। থাকতে চাইছেন ছোট দালানগুলোতে।
আরও পড়ুন:
ময়মনসিংহ মহানগর সুজনের সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘একটি ভবন অনুমোদনের জন্য সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসের দরকার পড়ে। এমনকি, নীতি-নৈতিকতারও দরকার আছে। কিন্তু কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে সব বিভাগে ভবনগুলোকে তারা অনুমোদন দিচ্ছে। আর সেসব যেন মৃত্যুফাঁদ।’
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত সিসমিক জোন মানচিত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জোন-১ এ রয়েছে বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বেশ কিছু ফল্ট বা চ্যুতি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ডাউকি ফল্ট। ভারতের উত্তরপূর্ব থেকে এ ফল্ট উত্তরপশ্চিমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ঘেঁষে বিস্তৃত। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারক বলেন, ‘ফল্টের অবস্থান এ অঞ্চলগুলোকে কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ করে তুলেছে। এ অবস্থানের কারণেই এ এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নিঃসন্দেহে কোনো এলাকায় যদি একটি শেকিং তৈরি হয়, এই ফল্টের পার্শ্ববর্তী এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এদিকে, নকশা অনুমোদন নিলেও ভবন নির্মাণে নিয়ম মানা হয় না বলে স্বীকার করেছেন সিটি কর্পোরেশনের খোদ নগর পরিকল্পনাবিদ। আর লোকবল সংকটকে দোষ দিচ্ছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নেই ঝুকিঁপূর্ণ ভবনের তালিকাও।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস বলেন, ‘ডিজাইন নেয় সুন্দর করে, ভূমিকম্প সহনীয়, বিল্ডিং কোড মেনে। করার সময় দেখা যায় তারা অদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে বা মিস্ত্রিদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে।’
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ভূমিকম্পসহ বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা প্রায় অসম্ভব বলছে ফায়ার সার্ভিস।
আরও পড়ুন:
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘ভবনগুলো নির্মাণকালে যে মনিটরিংটা করা প্রয়োজন, সেটা এ দুজন সার্ভেয়ারের মাধ্যমে বা লোকবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভূমিকম্পের প্রস্তুতিমূলক সেরকম কোনো সরাসরি কার্যক্রম আমাদের নেই। তবে সিটির অংশ হিসেবে প্রচারণামূলক কাজ আমরা করতে পারি।’
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে বলেছি, তারা একটা তালিকা প্রণয়ন করবে। যেখানে ময়মনসিংহ শহরে কী পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং আছে, সেসব থাকবে। আমরা তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংগুলোতে বসবাস করতে নিরুৎসাহিত করবো।’
আরও পড়ুন:




