তীব্র ভূমিকম্পের পর মানসিক ট্রমা? যে ৫ উপায়ে কাটাতে পারেন আতঙ্ক

তীব্র ভূমিকম্পের পর মানসিক ট্রমা?
তীব্র ভূমিকম্পের পর মানসিক ট্রমা? | ছবি: এআই
0

সম্প্রতি দেশে অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার মতো তীব্র ভূমিকম্পের পর জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের (Bangladesh 5.7-magnitude earthquake) ২৪ ঘণ্টা না পার হতেই আবারও প্রায় একই জায়গায় পরপর দু’বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই রাতে ঘুমাতে গিয়েও কম্পনের অনুভূতি বা পুনরায় ভূমিকম্প (Earthquake fear) হওয়ার দুশ্চিন্তা অনুভব করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় ভূমিকম্পগুলোর (earthquake in bangladesh 2025) মধ্যে একটি।

ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মনে যে তীব্র মানসিক চাপ ও ভয় সৃষ্টি হয় (Earthquake Trauma Coping), তা দ্রুত কাটিয়ে না উঠলে দৈনন্দিন জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অনুসরণ করলে দ্রুত এই ট্রমা (Earthquake Trauma) কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ভূমিকম্পের পর মানসিক চাপ কমানোর উপায় (Reduce mental stress) ও পরবর্তী ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:

নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত যত্নকে অগ্রাধিকার দিন (Earthquake Safety First)

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে মানসিক শান্তি আসে।

করণীয়: আপনার বাসস্থান নিরাপদ কিনা, তা নিশ্চিত করুন। পরিবারকে নিয়ে ভূমিকম্প হলে করণীয় (What to do during earthquake) বিষয়ে একটি ছোট পরিকল্পনা তৈরি করুন। এটি এক ধরনের নিরাপত্তা টিপস (Safety tips) হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মাধ্যমে শারীরিক যত্ন নিন।

আরও পড়ুন:

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন (Breathing Exercises for Anxiety)

তীব্র আতঙ্কের সময় আমাদের শরীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। এই সময় শান্ত থাকার সহজ উপায় হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম।

পদ্ধতি: গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। নিয়মিত এই উদ্বেগ কমানোর ব্যায়াম (Anxiety relief exercises) করলে মানসিক চাপ তাৎক্ষণিকভাবে কমে। এই গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের উপকারিতা (Deep breathing benefits) স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং প্যানিক অ্যাটাক (Panic attack) হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

|এখন টিভি

অন্যদের সাথে কথা বলুন এবং উদ্বেগ ভাগ করে নিন (Talk About Earthquake Fear)

ট্রমা বা ভূমিকম্পের ভয় কাটিয়ে ওঠা (Overcoming earthquake fear) একা সম্ভব নয়। আপনার অনুভূতি প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যোগাযোগ: নিজের বন্ধু, আত্মীয় বা বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা ও আপনার বর্তমান উদ্বেগ (Anxiety) নিয়ে কথা বলুন। এই ট্রমা শেয়ার করা (Share trauma) প্রক্রিয়াটি মানসিক চাপকে দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে অনানুষ্ঠানিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সাপোর্ট (Mental health support) গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুন:

সংবেদনশীল সংবাদ এবং আলোচনা থেকে দূরে থাকুন (Avoid News After Earthquake)

যারা খুব বেশি আতঙ্কিত, তাদের জন্য বারবার ভূমিকম্প সংক্রান্ত খবর দেখা বা আলোচনা করা ক্ষতিকর।

পরিহার: অতিরিক্ত খবর দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকম্পের গুজব (Earthquake rumors) থেকে দূরে থাকুন। এটি মানসিক শান্তি (Mental peace) বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার স্নায়ুর ওপর অতিরিক্ত স্নায়ুর চাপ কমানো (Reduce nerve strain) নিশ্চিত করে।

পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন (Seek Professional Counselling)

যদি মানসিক চাপ তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা অবহেলা করা উচিত নয়।

পরামর্শ: যদি আপনার মানসিক চাপ (Mental stress) এক সপ্তাহ পরেও না কাটে, তবে ট্রমা কাউন্সেলিং (Trauma counselling)-এর জন্য পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ (Psychiatrist advice) নেওয়া জরুরি। এটি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চিকিৎসা (Mental treatment) প্রয়োজন কিনা, তা নির্ধারণ করবে।

আরও পড়ুন:

শিশুদের ট্রমা মোকাবিলায় বিশেষ টিপস (Additional Tips for Trauma Coping)

সংবেদনশীল দৃশ্য পরিহার: দুর্ঘটনার দৃশ্য, ছবি বা ভিডিও (Avoid Graphic Content) বারবার দেখানো বা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের গ্রাফিক বিষয়গুলো শিশুদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এমন বিষয়গুলো থেকে কিছুটা বিরতি নেওয়া প্রয়োজন।

নিয়মিত রুটিন বজায় রাখুন: শিশুর ঘুম, খাবার, খেলা ও পড়াশোনার মতো স্বাভাবিক নিয়মিত রুটিন (Maintain Routine) দ্রুত ফিরিয়ে আনুন। এটি শিশুদের মধ্যে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি (Restore Stability) জাগাতে এবং মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা: শিশুদের সঙ্গে তাদের ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন (Talk to Kids About Trauma) এবং তাদের অনুভূতির প্রতি সর্বদা সম্মান দেখান (Emotional Support)।

রিলাক্সেশন কৌশল ব্যবহার: মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ছোট ছোট খেলাধুলা, শারীরিক কার্যকলাপ (Physical Activity)-এ অংশ নিন। এছাড়া মেডিটেশন বা অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিক (Relaxation Techniques) অনুশীলন করুন।

ইতিবাচক যোগাযোগ নিশ্চিতকরণ: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগ (Positive Family Communication) বজায় রাখুন। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং প্রয়োজনে মানসিক সমর্থন দিন।

মিডিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ: সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ (Media Consumption Limit) মাধ্যমে প্রচারিত দুর্যোগ সংক্রান্ত খবরগুলো দেখে অতিরিক্ত আতঙ্কিত না হওয়ার (Control Panic) চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সংবাদ দেখার সময় সীমিত করুন।

এর আগে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পের (highest earthquake in bangladesh after 2000) এর একদিন পর শনিবার (২২ নভেম্বর) পর পর দুবার ভূমিকম্প (Highest earthquake in Dhaka) অনুভূত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় হলো সাভার এলাকায় এবং সন্ধ্যা ৬টার পর আবারও রাজধানীতে দু’বার ভূমিকম্প (Recent earthquake in Bangladesh) অনুভূত হলো।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ মার্চ রাজধানীতে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। তারও আগে ২৮ মে দিবাগত রাতে ভারতের মণিপুরের মোইরাং শহরের কাছে আরেকটি ভূমিকম্পের কম্পন বাংলাদেশেও অনুভূত হয়।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাসে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার তালিকা নিচে দেওয়া হলো--List of earthquakes in Bangladesh

  • 2025-11-22: নরসিংদীতে ৩.৩, ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ঝটকা, ক্ষয়ক্ষতি খুবই সামান্য।
  • 2025-11-21: নরসিংদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০ জনের মৃত্যু ও ৬২৯ জন আহত হয়, মাঝারি ক্ষয়ক্ষতি।
  • 2023-12-02: চট্টগ্রামে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ২১৩ জন আহত হয়, ক্ষয়ক্ষতি সামান্য।
  • 2021-11-26: চট্টগ্রামে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি খুব সামান্য।
  • 2012-03-18: ঢাকায় ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের কোন প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি রিপোর্ট হয়নি।
  • 2010-09-10: চট্টগ্রামে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি খুব সামান্য।
  • 2008-07-26: ঢাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৫ জন আহত হয়, ক্ষয়ক্ষতি কম।
  • 2007-11-07: চট্টগ্রামে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০ জন আহত হয়, ক্ষয়ক্ষতি সামান্য।
  • 2003-07-26: চট্টগ্রামে ৫.৫ ও ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়।
  • 2002-06-20: রংপুরে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৫ জন আহত হয়।
  • 2001-12-19: ঢাকায় ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০০ জন আহত হয়।
  • 1999-07-22: মহেশখালী দ্বীপে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬ জন আহত ও মাঝারি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
  • 1997-11-21: চট্টগ্রামে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৩ জন আহত হয়, ক্ষয়ক্ষতি সামান্য।
  • 1989-06-12: খুলনায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ জনের মৃত্যু ও ১০০ জন আহত হয়।
  • 1988-02-06: সিলেটে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ জন আহত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
  • 1923-09-09: নেত্রকোণায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০+ জনের মৃত্যু ও ১০০+ আহত হয়, শক্তিশালী ক্ষয়ক্ষতি।
  • 1918-07-08: নেত্রকোণায় ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃতি অজানা।
  • 1762-04-02: চট্টগ্রামে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ২০০+ জনের মৃত্যু হয়, মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও স্থানীয় সুনামি হয়। (তথ্য : উইকিপিডিয়া)

এসআর