টানা চারদিনের মতো ইসরাইলি হামলার জবাবে ইহুদি ভূখণ্ডে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে তেহরান। তেল আবিব, হাইফার মতো বড় বড় শহরে ইরানের এমন মিসাইল বৃষ্টিও আগ্রাসী হামলা আগে কখনোই দেখেনি ইসরাইল। দুই দেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কঠিন হওয়ার পাশাপাশি কোন পক্ষ এই যুদ্ধে কতোদিন টিকে থাকবে, কার কাছে কতটুকু অস্ত্রের মজুত আছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মিসাইল প্রোগ্রাম কুক্ষিগত ইরানের কাছে। ধারণা করা হয়, বিভিন্ন পাল্লার কয়েক হাজার ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে তেহরানের কাছে। এই সক্ষমতায় আরও কয়েক সপ্তাহ ইসরাইলে কেবল হামলা চালিয়ে যেতেই সক্ষম হবেনা ইরান, ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতিও হবে আকাশচুম্বী। হামাস, হিজবুল্লাহ আর হুতিদের হামলা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কোন হামলার শিকার হয়নি ইসরাইল।
এরমধ্যে তেহরান প্রমাণ করে দিয়েছে, অত্যাধুনিক মিসাইল সক্ষমতা। হজ কাশেম মিসাইল ইরান প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছে রোববার। ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাপিয়ে এই মিসাইল আঘাত হেনেছে ইহুদি ভূখণ্ডে। ইসরাইল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বিভিন্ন পাল্লার অত্যাধুনিক সব মিসাইল ইরান ব্যবহার করছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
যদিও ইরানের কাছে পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক মিসাইল নেই, কিন্তু যেই মিসাইল আর ড্রোনের বহর আছে, তা ইসরাইলের ভয়াবহ পরিণতির জন্য যথেষ্ট। আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের মিসাইল ব্যারেজের মধ্য দিয়ে নিজেদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আয়রন ডোম বহুবার ব্যবহার করেছে ইসরাইল। যা তেল আবিবকে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি কিংবা কোন সেনা সদস্যের ওপর হামলা না চালানোর কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের যৌথ আগ্রাসন ঠেকাতেই এমন সতর্কতা তেহরানের।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, এক্ষেত্রে ইরানের কাছে অন্য উপায় রয়েছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশ্ববাজারে ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দর বেড়ে পৌঁছাতে পারে ১০০ কোটি ডলারের ওপরে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে ইরান অনেক দেশকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।
দেশের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত নাও করতে পারে তেহরান। ইরানের সমরাস্ত্রের মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও ইসরাইলের সমরাস্ত্র শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে, এমন আশঙ্কায় যুদ্ধ আর দীর্ঘায়িত নাও করতে পারে তেহরান।
অন্যদিকে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলছে, ইরানের হামলার ধরনে স্পষ্ট, তেহরানের অস্ত্রের মজুত কমছে। সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জীবন। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না করে কতোদিন টিকে থাকবে, সেই প্রশ্ন ঘুরছে নানা মহলে।





