পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রনায়কই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু হতে চান - যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই আত্মবিশ্বাসের কিছুটা ঝলক দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন আর কারা পাননি এ নিয়েই চলছে নানা আলোচনা।
আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ৭৮ বছর বয়সী এই এই রাজনীতিবিদ। এক মাস আগে থেকে চলছে আমন্ত্রণ পাঠানোর পর্ব। সে তালিকায় ইতালি বা আর্জেন্টিনার রাষ্ট্র প্রধানদের অগ্রাধিকার দেয়া হলেও, কোনো কোনো গণমাধ্যমের দাবি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আমন্ত্রণ পাননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যদিও গার্ডিয়ানের তথ্য বলছে, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলা হচ্ছে, কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আমন্ত্রণ না পেলে সে দেশের প্রতিনিধি আমন্ত্রণ রক্ষা করবেন - এমনটা স্বাভাবিক নয়, পাশাপাশি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেনি। ফলে, নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি - এ নিয়ে সঙ্গত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ভারতীয় গণমাধ্যমও। বরং শুক্রবার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালও বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তবে ২০১৭ সালের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাজনীতিতে এসেছে অপ্রত্যাশিত পালাবদল। তাই, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকার গুরুত্ব অস্বীকার করছেন না বিশ্লেষকরা। চীন বিরোধী শুল্ক নীতির হুঁশিয়ারি দিয়েও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেনি রিপাবলিকান শিবির। তবে শি জানিয়েছেন তার বদলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান জেং অংশ নেবেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে।
আমন্ত্রিতদের তালিকার শুরুতেই জায়গা পেয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই ও ব্রাজিলের ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোরানো। যদিও ব্যস্ততা থাকায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ওরবান। আর, শপথ গ্রহণের এক মাস আগেই ট্রাম্পের আমন্ত্রণ রক্ষার কথা জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলনি।
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও - এর। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকেও। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও আমন্ত্রণ পেয়েছেন রিফর্ম পার্টির নেতা। ইউরোপের কয়েকজন আইনপ্রণেতাসহ জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন অলটারনেটিভ পার্টির চ্যান্সেলর প্রার্থী এলিস উইডেল।
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া, মার্কিন মুলুকের আরও তিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও থাকবেন এই আয়োজনে।
এদিকে, ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্প টু পয়েন্ট ও- এর যাত্রা শুরু দিনে বর্ষীয়ান এই নেতার পাশে থাকবেন বিশ্বনন্দিত টেক বিলিওনেয়ার ও ধনকুবেররা। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, অ্যাপেলের টিম কুক ও মেটার মার্ক জাকারবার্গকে দেখা যাবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। এছাড়া, রিপাবলিকান অর্থ দাতাদের পাশাপাশি কট্টরপন্থী বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদও থাকবেন এই আয়োজনে।
তবে পলিটিকোর তথ্য বলছে, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লিয়েন। যদিও ওয়াশিংটনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জোভিতা নেলিউপসিয়েনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া, আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনবারের প্রার্থী ও কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মেরিন লা পেনকে।