ইসরাইলের মিসাইল হামলায় হারিয়েছেন পা। এরপরও গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাননি কোথাও। আবারও হামলা হতে পারে জেনেও হাসপাতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধাহত রোগীদের। পুরো হাসপাতালে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চিকিৎসা দিচ্ছেন আহত আর অসুস্থ রোগীদের। অথচ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে গাজার হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। চিকিৎসক সংকটে এত রোগীকে সেবা দেয়াও হয়ে যাচ্ছে কষ্টসাধ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্তত ১২ হাজার ফিলিস্তিনি রোগীকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
গাজার একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমি আলাদা পা লাগিয়েছি, যেন বাচ্চাদের চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু আমার অনেক কষ্ট হয় এটা পড়ে হাঁটতে। আমাদের এখন চরম চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট। ওষুধ নেই, জ্বালানি শেষের পথে, ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে চিকিৎসা করি। অপারেশনও করতে হয়।’
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যেভাবে উপত্যকার হাসপাতালগুলো জ্বালানি আর চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে ধুঁকছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্বাস্থ্যসেবা। উপত্যকায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জ্বালানি প্রবেশ করতে না দেয়ায় কয়েকটি হাসপাতাল তো আংশিক বন্ধই হয়ে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, এখানকার হাসপাতালগুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে যাচ্ছে।
গাজায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একজন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের এই জ্বালানি সংকট এর আগে কখনও হয়নি। হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো জেনারেটরে চলে। আমাদের তো জ্বালানি দরকার হয়। জ্বালানি আনতেও পারছি না, হাসপাতাল চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে এত বর্বরতার মধ্যেও থেমে নেই উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন। শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হামলায় নতুন করে হতাহত হয়েছেন অনেকেই। মধ্য গাজার বুরেইজ আর নুসেরাইত শরণার্থী শিবিরেও হয়েছে বোমা হামলা। একদিকে গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন, অন্যদিকে বন্দি বিনিময়ের শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি আলোচনা, এভাবেই প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে হামাস–ইসরাইল যুদ্ধ।
এরমধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর নিয়ে চলছে আলোচনা। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি কার্যকরে হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় যাচ্ছে ইসরাইলের প্রতিনিধি দল। তাদের মধ্যে রয়েছে মোসাদ আর শিন বেত সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধানরা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্দি বিনিময়ে হামাস সম্মত হলে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ইসরাইল। কিন্তু নেতজারিম করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার করা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ইসরাইলি বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, বন্দি বিনিময় চুক্তির শেষদিকে এসে পৌঁছেছে হামাস আর তেল আবিব। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সিদ্ধান্ত ৯০ শতাংশ এগিয়েছে।
এদিকে হামাসও ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত। এখন শুধু তেল আবিবের সহিংসতা বন্ধের অপেক্ষা। তবে এই বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার কিংবা যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের আগেই যুদ্ধবিরতিতে আসতে চায় হামাস-ইসরাইল।
গাজার যুদ্ধ ইসরাইলের জন্য বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। এই আগ্রাসন চালিয়ে যেতে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত তেল আবিবের খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
ইসরাইলি বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, যুদ্ধে অর্থ ব্যয়ের কারণে চাপ পড়ছে ব্যাংক অব ইসরাইল, সামরিক খাত, নাগরিকদের স্বার্থে ব্যয়ের ওপর। রাজস্ব আয়ে হচ্ছে লোকসান।
এই প্রভাব আসছে এক দশকে থাকবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাজেটের ওপর। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী এক দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ইসরাইলের ব্যয় করতে হবে অতিরিক্ত আরও সাত হাজার ৪০০ কোটি ডলার।