বাশার আল আসাদের বাবা সাবেক সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের ভাস্কর্য গুড়িয়ে ফেলা হয়। বিদ্রোহীদের হামা দখলের পর এমন বুনো উল্লাস দেখা গেছে পুরো শহরজুড়ে। ভাস্কর্যের মাথাকে গাড়ির পেছনে বেধে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শহর প্রদক্ষিণ করে সাধারণ জনতা।
রাজধানী অভিমুখে অভিযানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সত্ত্বেও সিরিয়ান বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। ইদলিব, আলেপ্পো ও হামার পর হায়াত তাহরির আল শামের হাতে পতন হয়েছে চতুর্থ শহর দারা'র।
জর্ডান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ৯০ শতাংশের বেশি এখন বিদ্রোহীদের দখলে। কৌশলগত এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে দারা দখল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১১ সালে সিরিয়ায় আরব বসন্তের হাওয়া শুরু হয় এই অঞ্চল থেকে।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমরা এই সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের শহর মুক্ত হলো।’
ইদলিবের স্থানীয় একজন বলেন, ‘বাশার ও তার বাবা ৫০ বছর ধরে জুলুম করে আসছে। আল্লাহর সর্বশক্তিমান। জালিমরা পরাজিত হলো।’
বিদ্রোহীদের একজন বলেন, ‘আমরা এখানেই থেমে যাচ্ছি না। দামেস্কে গিয়ে দেশবাসীকে বাশারের শাসনের হাত থেকে মুক্ত করবো।’
বর্তমানে পঞ্চম শহর হোমসে প্রবেশ করেছে বিদ্রোহীরা। রাজধানী দামেস্ককে হোমসের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে ৪৬ কিলোমিটারের সড়ক। বর্তমানে যা এইচটিএসের দখলে। বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ যুদ্ধবিমান হামলা চালালেও কমছে না অভিযানের গতি। প্রাণ বাঁচাতে চাইলে আসাদের দল ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার হুমকি দিয়েছে হায়াত তাহরির আল শাম।
এইচটিএসের কমান্ডার হাসান আব্দুল ঘানি বলেন, ‘আলেপ্পো ও হামায় সরকারি বাহিনীর কী পরিণতি হয়েছে, তা নিশ্চয়ই জানেন। তাই ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাইলে দলত্যাগী হোন। অথবা করুন স্বৈরশাসকের সঙ্গে করুণ পরিণতি ভোগ করুন।’
এদিকে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছেন এরদোয়ান। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের আশা, কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই সিরিয়াজুড়ে চলবে বিদ্রোহীদের অভিযান। তবে বাশার সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এছাড়াও দামেস্ককে ড্রোন ও মিসাইলের পাশাপাশি সামরিক উপদেষ্টা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ‘তাহরির আল শাম কিংবা জাবাত আল নুসরার মতো যারা গৃহযুদ্ধে পুনরায় লিপ্ত, তারা জাতিসংঘ কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাই আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যে হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, ‘আমার আশা, বড় কোনো বাধা ছাড়াই তারা এগিয়ে যাবে। যদিও সরকারি বাহিনী কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ফোন দিয়ে বৈঠকের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তার পক্ষ থেকে ইতিবাচক উত্তর পাইনি।’
সিরিয়ার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, আইএসআইএস এর পুনরুত্থান ঠেকাতে দেশটিতে অবস্থান করবে মার্কিন সেনারা। আর তাদের নিরাপত্তা দেবে বাশার আল আসাদ সরকার।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে বলেন, ‘মার্কিন নাগরিক ও সেনাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিরিয়ান সরকার। কারণ আমাদের সেনারা সিরিয়ায় আইএসআইএসের পুনরুত্থান রুখতে কাজ করে যাচ্ছে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট কুর্দি বিদ্রোহীরা পূর্বাঞ্চলীয় দেই এল জোর অঞ্চল দখলে নিয়েছে। যদিও বাশার সরকারের পতনের বদলে নিজেদের অঞ্চল রক্ষায় মনোযোগ দিয়েছে গোষ্ঠীটি।