এশিয়া
বিদেশে এখন
0

‘দক্ষিণ কোরিয়ায় অস্থিতিশীলতার সুযোগে হামলা করতে পারে উত্তর কোরিয়া‘

একনায়কতন্ত্রের পথকে সুগম করতে সামরিক আইন জারি করার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে অভিশংসন প্রস্তাব। দুই-তৃতীয়াংশ আইন প্রণেতাদের ভোট ইয়ুন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গেলে অফিস ছাড়তে বাধ্য হবেন তিনি। এদিকে বিরোধী দলের প্রধানের দাবি, দেশের অস্থিতিশীলতার সুযোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলা করতে পারে উত্তর কোরিয়া।

৪৪ বছর পর প্রথমবারের মতো সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার পথ বেছে নিয়েছিলেন ইয়ুন সুক ইওল। তবে তীব্র গণআন্দোলন ও বিরোধী আইনপ্রণেতাদের দুরদর্শিতায় মাত্র ৬ ঘণ্টার মাথায় মার্শাল ল প্রত্যাহারে বাধ্য হন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। এতে পিপল পাওয়ার পার্টির নেতার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।

দেশকে একনায়কতন্ত্রের পথে নেয়ার অপচেষ্টার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট ইওলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অভিশংসন প্রস্তাব। যা পাসের জন্য প্রয়োজন হবে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট। ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ১৯২টির দখল বিরোধীদের। বাকি ৮টি ভোট ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে দেয়া হবে কী না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা। যদিও বিশ্লেষকদের দাবি, প্রেসিডেন্টের অভিশংসন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

হানকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওন হাক সিওন বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় সামরিক আইন জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বৈধ কারণ ছাড়া সামরিক আইন জারি সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধের শামিল। পাশাপাশি রাষ্ট্রদোহিতার মতো অপরাধের অভিযোগও আনা হতে পারে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।’

আইন অনুসারে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি করতে হবে শনিবারের মধ্যে। প্রস্তাবের পক্ষে কমপক্ষে ২০০ ভোট পড়লে মেয়াদপূর্তির দুই বছর আগেই সাময়িকভাবে অপসারিত হবেন ইয়ুন সুক ইওল। প্রস্তাব পাস হলে সাংবিধানিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবেন প্রেসিডেন্ট। যেখানে ৯ বিচারকের আদালতে ৬টি ভোট বিরুদ্ধে গেলে স্থায়ীভাবে ইয়ংসাং প্রেসিডেনশিয়াল অফিস ছাড়তে হবে ইওলকে।

প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে যেকোনো সময় দেশটিতে হামলা করতে পারে উত্তর কোরিয়া। এমনটাই দাবি বিরোধী দলের প্রধানের।

ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়ার প্রধান লি জে মিয়ুং বলেন, ‘উত্তর কোরিয়াকে উসকানি দেয়ায় সামরিক সংঘাতের শঙ্কা বহু গুনে বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সাহসী থাকতে হবে। যাতে কেউ এই অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিতে না পারে।’

এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট ইওল। নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চোই বিয়ুং হুককে। সামরিক শাসন জারির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শদান ও পার্লামেন্টে সেনা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম, এমনটাই অভিযোগ করেছেন উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্শাল ল জারির বিষয়ে অবগত ছিল না যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গণতন্ত্র রক্ষায় সবসময় ওয়াশিংটনকে পাশে পাবে সিউল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে শক্তিশালী। রাজনৈতিক মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব কিংবা পার্থক্য থাকতে পারে। যা আইন মোতাবেক শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব। আমরা এখন এটাই চাই। স্থিতিশীলতা বজায় থাকা জরুরি।’

এদিকে ইওলের পদত্যাগের দাবিতে দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে জোড়ালো হচ্ছে বিক্ষোভ। মোমবাতি প্রজ্জলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সিউলের সড়ক ছিল সাধারণ জনতার দখলে।

এএম