ক্ষমতায় আসার আড়াই মাসের মধ্যে শুধু বিশ্ব রাজনীতি নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও হইচই ফেলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহত্তম অর্থনীতি আর বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত কিংবা দরিদ্র, সব দেশে ঢালাওভাবে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন তিনি। দেশের আকাশচুম্বী বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গিয়ে উল্টো অন্য দেশে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে করে গেলো কয়েক দশক ধরে বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই।
ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়্যারের অর্থনীতি বিভাগ সহকারি অধ্যাপক থমাস বিগ্রেডস বলেন, 'শুল্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশল পরিষ্কার না। তাদের বড় পরিসরে কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেই। অনিশ্চয়তা দূর হবে কীভাবে? এই শুল্ক কতদিন কার্যকর থাকবে সেই নির্দেশনাও নেই। অর্থনৈতিক লক্ষ্য যখন পরিস্কার থাকবে না, তখন একটা দেশ বা রাষ্ট্র আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এরমধ্য দিয়ে অর্থনীতি আরও সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো।'
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে আমদানি পণ্যের দর বেড়ে গিয়ে চাপ পড়তে পারে মার্কিন নাগরিকদের ওপর। ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে চাকরির বাজার। এই শুল্কনীতির কারণে স্মার্টফোন থেকে খাদ্যপণ্য পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দর বাড়বে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে যা আরও ঊর্ধ্বমুখী করবে। তাদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক মাসেই এই প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বের গ্রাহক আর ব্যবসায়ীদের ওপর।
ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়্যারের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক থমাস বিগ্রেডস বলেন, 'যদি মনে করেন যেসব পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে, সেসব দেশে বড় আকারে শুল্ক চাপিয়ে দেবেন, তাহলে দেশেও পণ্যের দর বাড়বে। তাইওয়ান থেকে আমরা কম্পিউটার চিপ কিনি। এখন এই চিপের দাম বাড়বে। কম্পিউটারের দাম বাড়বে। নেটফ্লিক্সের মতো প্লাটফর্মের খরচ বাড়বে।'
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন আর ভারতের মতো বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের পাশাপাশি শুল্কারোপ হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, মিয়ানমার, আর আফ্রিকার দেশগুলোতে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এই শুল্কারোপে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশসহ কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, লাওসের মতো রপ্তানি নির্ভর দেশগুলোও।
এদিকে অটোমোবাইল খাতে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের কারণে সারাদেশে প্রতিবছর বিক্রি হওয়া লাখ লাখ গাড়ির দাম বেড়ে যাবে। অর্থনীতির ভিতগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় অটোমোবাইল খাত। যেই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ কর্মসংস্থান। বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্বাপদসংকুল এই খেলায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, মূল্যস্ফীতি বাড়বে পুরো বিশ্বে। ফলে, চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ববাণিজ্যে।