গেল জুনে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০০ এরও বেশি আবর্জনা ভর্তি বেলুন পাঠায় উত্তর কোরিয়া। তার আগে রাজধানী সিওল-সহ সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে কয়েকদফায় ড্রোন পাঠায় পিয়ংইয়ং। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মতো 'নো ফ্লাইং জোনে' ড্রোন উড়িয়ে সক্ষমতার জানান দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এবার সুইসাইড ড্রোনের সফল মহড়া চালিয়ে, প্রতিপক্ষের ঘাঁটিতে নজরদারি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ায় সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেআরটি'র একটি প্রতিবেদনে আত্মঘাতী বা সুইসাইড ড্রোনের মহড়ার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে কিম জং উনের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, সুইসাইড ড্রোনের ম্যাস প্রোডাকশন নিয়ে ভাবছে পিয়ংইয়ং। প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করা হয়, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সক্ষমতা জানান দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন কিম। এর আগে, আত্মঘাতী ড্রোন তৈরির শুরুর দিকে পুরো বিষয়টি তদারকি করেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা।
চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়ার সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন কিম। বিশেষ করে সমরাস্ত্র নির্মাণে মস্কোর কাছে কারিগরি সহায়তা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখায় পিয়ংইয়ং। 'অ্যাক্সিস অব ইভিল' খ্যাত চার দেশ, চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়াকে নিয়ে বরাবরই শঙ্কা জানিয়ে আসছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। এবার সে আশঙ্কার আগুনে ঘি ঢালতে মস্কোকে সেনা সহায়তা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
১৩ নভেম্বর একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের দখল নিতে ৫০ হাজার সেনা নিয়ে চলমান মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন উত্তর কোরীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ইউক্রেনীয় এক সাংবাদিকের সংগ্রহে থাকা তিনটি আলাদা ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, উত্তর কোরীয় সেনারা রাশিয়ার সমরাস্ত্র ব্যবহার করেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অনুসরণ করছেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কমান্ড।
পিয়ংইয়ংয়ের এমন আচরণের পাল্টা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল। বলেন, মস্কো-পিয়ংইয়ং একজোট হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, কিয়েভকে সেনা সহায়তা পাঠাবে সিউল। স্পেনের সংবাদ সংস্থা ইএফই-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন আশঙ্কা জানান, উত্তর-কোরিয়া আর রাশিয়ার এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। আর উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনের সাথে রাশিয়ার জোট বা 'অ্যাক্সিস অব ইভিল' গোটা ইউরোপ ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেছেন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট।
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, 'ব্যালিস্টিক মিসাইল ও সমরাস্ত্র পাঠানোর পর নীতিবিরুদ্ধ একটি যুদ্ধে অংশ নিতে রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে মিসাইল তৈরির প্রযুক্তির পাশাপাশি অর্থ দিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। বিষয়টি উদ্বেগের। এসব ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরো আটলান্টিকের জন্য সরাসরি হুমকি।'
ন্যাটো প্রধান আরও অভিযোগ করেছেন, ইরানের সরবরাহকৃত অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। মার্ক রুট আরও মনে করেন, এর বিনিময়ে মস্কো থেকে অর্থ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সিদের মদত দিচ্ছে তেহরান। আর দিনশেষে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে রাশিয়াকে সহায়তা দিয়ে আসছে চীন। এই 'অ্যাক্সিস অব ইভিল' বা ৪ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ইউরোপের জন্য অশনি সংকেত বলেও মনে করে ন্যাটো প্রধান।