লেবাননে ধ্বংসাত্মক বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের পাল্টা জবাব দিতে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। উত্তর ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নগরী হাইফাতে প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে অনেক ইসরাইলি আহত হয়েছেন ও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ অবস্থায় আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ইসরাইলি বাহিনী। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে থাকা দুটি শহরে ইসরাইলি বিমান হামলা চালিয়ে শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা জোরালো করতে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডারের সাথে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এসময় লেবাননের ভূখণ্ডে বিভিন্ন সফল হামলার প্রশংসা করেন তিনি।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'এক বছর আগে, আমরা একটি ভয়ানক ধাক্কা খেয়েছিলাম। এরপর গত ১২ মাসে আমরা অনেক কিছুর পরিবর্তন করেছি। আমাদের সেনারা শত্রুদের উপর যে আঘাত হেনেছে তাতে পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে গেছে। বর্তমানে লেবাননের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে তার জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আপনারা বিজয়ের প্রজন্ম। আপনাদের হাত ধরে আমরা বিজয়ী হবেই।'
লেবাননের বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, 'লেবাননে যেভাবে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অনেক উদাহরণ রয়েছে। কেবল ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। বহু বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি মানবিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে।'
এ অবস্থায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেন লেবাননের শিক্ষামন্ত্রী। তবে চাইলে নিজস্ব ঝুঁকিতে বছরের শুরু থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে পারবে বলে জানান তিনি।
লেবাননের শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস হালাবি বলেন, 'এই মুহূর্তে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব। কারণ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও গোলাবর্ষণ হচ্ছে। তাছাড়া অনেক নিরাপদ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘরছাড়া মানুষের আশ্রয়ের জন্য খুলে দিতে হচ্ছে। তাই এই সংকটের সময় শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেয়া ঠিক হবে না।'
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও আক্রমণ সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। এছাড়া ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হলে ইরানের অবস্থাও গাজা-লেবাননের মতো করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। ।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, 'ইরানিরা আমাদের আকাশ শক্তিকে স্পর্শ করতে পারেনি। কোনো বিমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বিমান বাহিনী কোনো কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। যারাই ভাববে ক্ষতি করার মাধ্যমে আমাদের আটকাবে, তাদের গাজা এবং লেবানে আমাদের অর্জন দেখা উচিত।'
ইসরাইলি হামলার হুমকিতে সতর্ক অবস্থানে ইরান। রোববার রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সব বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধরে পুনরায় সচল করা হচ্ছে ইরানের বিমানবন্দরগুলো। ইসরাইল যদি কোনো হামলা চালায় তাহলে তাদের লক্ষ্য করে আবারও হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরানও।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরানের এলিট ফোর্স কুদস বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর তিনি লেবাননে গিয়েছিলেন। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের এক বছর পূর্তিতে এসে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় এক বছরে মোট প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজারে পৌঁছেছে। এরমধ্যে শিশু ১৬,৭৫৬ এবং নারী ১১,৩৪৬জন।