এশিয়া
বিদেশে এখন
0

জোরালো হচ্ছে যুদ্ধের শঙ্কা, মিত্রদের কতটা সমর্থন পাবে ইরান!

ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে ইরান কি আদৌ পাবে মিত্রদের সমর্থন? তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এর মধ্যেই হামাস-হিজবুল্লাহ'র পাশাপাশি ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলার মাধ্যমে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এবং ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। কিন্তু আঞ্চলিক যুদ্ধে প্রভাব ফেলার সক্ষমতা এসব গোষ্ঠীর কতোটা?

প্রায় এক বছর ধরে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর আর বাব আল-মান্দেব প্রণালীতে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। লক্ষ্য- গাজায় আগ্রাসন বন্ধে ইসরাইলের ওপর চাপ তৈরি। একই লক্ষ্যে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহও।

গেলো সপ্তাহে বৈরুতে ইসরাইলের বড় ধরনের বিমান হামলায় প্রাণ যায় তিন দশকের বেশি সময় হিজবুল্লাহ'র নেতৃত্বে থাকা হাসান নাসরাল্লাহ'র। তারপর থেকেই সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইসরাইল।

সুইজারল্যান্ডে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক জোসেফ দাহের বলেন, 'হিজবুল্লাহকে দুর্বলতম অবস্থানে নিয়ে যেতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা ধরনের চেষ্টা করছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহ'র সামরিক শক্তি ধ্বংসের পাশাপাশি ইরান থেকে কথিত প্রতিরোধকামীদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ইসরাইল আরও অনেককিছুই করতে চায়।'

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শাসকদল হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতিদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের চক্ষুশূল ইরান। ইরান-ইসরাইলের সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা জোরালো হতে থাকার মধ্যেই ইসরাইলের সমর্থনে অবস্থান বারবার স্পষ্ট করেছে কয়েক দশকের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

এমন পরিস্থিতিতে নাসরাল্লাহকে হত্যার পরই লেবানন ও গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইলে আক্রমণ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় হুতি বিদ্রোহীরা। ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ঘাঁটি আর লোহিত সাগর তীরবর্তী বন্দরনগরী এইলাটে চালায় ড্রোন হামলাও। তখন থেকেই হুতিদের পাশাপাশি ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরাকের সশস্ত্র শিয়া বিদ্রোহীরাও।

লেখক ও ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তোহিদ আসাদি, 'শুরুতে যখন একটু একটু করে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছিল, তখনও সর্বাত্মক বা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পুরো পশ্চিম এশিয়াকে টেনে আনতে ইরান আগ্রহী ছিল না। কিন্তু ঘটনার ধারাবাহিকতায় এখন ইরান দুই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। একদিকে বলছে যে তারা যুদ্ধ চায় না, তারা যুদ্ধবাজ নয় যেমনটা প্রেসিডেন্ট বলেছেন। অন্যদিকে তারা বলছে যে আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না।'

যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরান ও মিত্র গোষ্ঠীগুলোর বেশিরভাগ হামলা নস্যাতের দাবি করেছে ইসরাইল। যদিও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে দেখাচ্ছে ইসরাইল, রয়েছে এমন সমীকরণও। হুতিদের দাবি, দুই হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ইসরাইলের কেন্দ্রে আঘাত হানা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি ইসরাইল। ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় অংশ নিলে বা সহযোগিতা করলে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতেও হামলার হুমকি ইরাকি গোষ্ঠীগুলোর।

এ অবস্থায় গাজা-লেবাননের পর ইরাকেও ইসরাইলের হামলার হুমকির জবাবে ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পাল্টা হুঁশিয়ারি- ইসরাইলকে ঠেকাতে প্রয়োজনে পুরো অঞ্চলের তেলের মজুত উড়িয়ে দেবে তারা।

খনিজ তেলের প্রশ্নে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোই শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা বলছেন, 'তেহরানের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে ইসরাইল।'

তোহিদ আসাদি আরও বলেন, 'সম্প্রতি তেহরান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা আর ধৈর্য্যের পরিচয় দেবে না। কারণ ধৈর্য্যেরও সীমা আছে, যার পরীক্ষা গেলো ক'মাসে বেশ কয়েকবার ইসরাইল নিয়েছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা, ইরানি দূতাবাসে হামলা, হিজবুল্লাহ'র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যাসহ ইসরাইলের ন্যাক্কারজনক এ আচরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ।'

পারস্য উপসাগরভিত্তিক জ্বালানি রপ্তানি খাতে বাধা এলে ভুগবে তেলের আন্তর্জাতিক বাজার, বিশ্ব অর্থনীতি, সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল সংস্থা আরামকোর দু'টি কারখানায় হুতিদের এক হামলায় দিনে তেল উত্তোলন কমে গিয়েছিল ৫০ লাখ ব্যারেল, যা সৌদি আরবের মোট উত্তোলনের অর্ধেক এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহের পাঁচ শতাংশ।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনসহ তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি থেকে ইরানে হামলা হলে কিংবা ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করা হলে এসব দেশকে শত্রু হিসেবে ধরে নেবে এবং পাল্টা হামলা চালাবে বলে সতর্ক করেছে ইরান।