দেশে এখন
0

বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার-দমনের কালো আইন যেভাবে বৈধ হয়ে উঠলো

'৭৪ এর বাকশাল থেকে '২৪ সালের আয়নাঘর

১৯৭৪ এর বাকশাল আর ২০২৪ এর বেআইনি আয়নাঘর। বিনা অপরাধে যে কাউকে গ্রেপ্তার ও দমন কীভাবে হয়ে উঠলো আইনগতভাবে বৈধ? কেউ ডাকেন কালো আইন আবার কেউ বলেন, নিবর্তন বা নিপীড়ন আইন, তবে বার বার সরকারের বদল হলেও বিনা অপরাধে বিরোধীমত দমনের এই আইন পরিবর্তন করেনি কেউ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ ও এই আইন বাতিলের এখন বিকল্প নেই।

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন ভূইয়া বলেন, ‘বিশেষ আইনের ৩ ধারায় সরকার চাইলেই যে কাউকে গুম করতে পারে। এই আইনে গুম করার পর সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধ্য নয় তাকে কেন গুম করা হলো সে বিষয়ে জানাতে।’

এই তরুণ আইনজীবীর মতে হজম করতে না পারা গুমের ঘটনা রাষ্ট্র দ্রোহীতার নামে চালিয়ে দেয়া হতো এই আইনের বলেই।

চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই করেছিলেন। সেই আইনে বা আইনের মার প্যাঁচে এক ধরনের গুম করার সুযোগ রয়েছে। ৩ থেকে ১৪ ধারা পর্যন্ত আটকের কথা বলা আছে। ৫ ধারাতে বলা আছে কাউকে যখন আটক রাখা হচ্ছে সেই আইনে সরকার জানাতে বাধ্য না তাকে কোথায় রাখা হচ্ছে। সিস্টেমেটিক্যালি গুম করার একটা অপপ্রয়াস থেকে যাচ্ছে।’

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. এহসানুল করিম বলেন, ‘একটা দানব আইন তৈরি করা হয়েছিল। আইনের মাধ্যমে কাউকে আটক রাখা যায় সেটাই বিগত সরকারের মাঝে দেখা গিয়েছে।’

সরকার বদলেছে বার বার। বিভিন্ন সময়ে এই আইনের প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু কেন তৈরি হয়েছিল এমন আইন?

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৭৪ সালে যে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট আনা হয়েছিল সেটার মাধ্যমে রাজনীতিকিদদের কাছ থেকে শুনতে পায় এর মাধ্যমে একটা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছিল সেসময়ের সরকার।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এদেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না। কোনো ব্যক্তি থাকবে না একমাত্র আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দল থাকবে। দমন করার জন্য। ইচ্ছে মতো যেকোনো লোককে আপনি আটকিয়ে রাখতে পারবেন।’

সংবিধান সহায়তা করেছে ৭৪ এর এই আইন তৈরিতে, যা এখন সময় বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয়। তবু, কেন কোনো দলই পরিবর্তন করেনি এই আইন? বিএনপি নেতাও দিলেন তার দলীয় ব্যাখ্যা।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এরপর যতগুলো সরকার আসছে তারা আইন বাতিল করে নাই। এরশাদ এসেছে সে করে নাই। বিএনপি করতে পারতো ৯১ সালে কিন্তু তিন জোটের আন্দোলনের রূপ রেখার মধ্যে পড়ে যাওয়ার ফলে তখন তারা করতে পারেনি।’

সম্প্রতি গুম প্রতিরোধ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এই স্বাক্ষরের ফলে কী পরিবর্তন আসতে পারে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ আইনের ক্ষেত্রে?

অ্যাডভোকেট মো. এহসানুল করিম বলেন, ‘এইসব আইন বাতিল বা সংশোধনের জন্য সংসদ থাকতে হয়। অনেকে বলে গণভোটের মাধ্যমে করা যেতে পেরে তবে গণভোটের আইন বাতিল হয়ে গিয়েছে। বাতিলের জন্য নির্বাচিত সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিশেষ ক্ষমতা আইন একটা কালো আইন আদালতে আমি অনেকবার আমি বলেছি এই আইন বাতিলের জন্য তবে এই আইন বাতিলের ক্ষমতা রাষ্ট্রের।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গুম কনভেনশনে বাংলাদেশ নাম লেখালেও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, এই আইনটি কবে বাদ দেয়া হবে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে রইলো। মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এখন দেখার বিষয় গুমবিষয়ক কনভেনশনে বাংলাদেশের সাক্ষর ঠিক কতটা বাংলাদেশের আইনে প্রভাব ফেলতে পারে, নিরাপত্তা দিতে পারে সাধারণ মানুষদের, টেনে ধরতে পারে কালো আইনের লাগাম।

ইএ