পাহাড়ের টিলায় বন বিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বিশাল গোয়ালের খামার। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়ায় আট বছর আগে এই খামার গড়ে তুলেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদ। সোমবার অভিযান চালিয়ে এই জায়গা উদ্ধার করে বন বিভাগ। যদিও এই সুযোগে এখানে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। নিয়ে যায় শতাধিল গরু ও খামারের নানা অবকাঠামো।
টিলার চারপাশে চোখে পড়লো ছোট-বড় বেশ কয়েকটি পুকুর। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে নানা জাতের মাছ চাষ করা হতো। বন বিভাগের অন্তত ৫০ একর জায়গা দখলে নিয়ে এই গোয়াল ও মাছের খামার গড়েছিলেন এরশাদ মাহমুদ।
স্থানীয় একজন বলেন, '২০০ এর বেশি গরু ছিল, কয়েকটা পুকুর আছে। তারা অনেকদিন ধরে এগুলো করেছে।'
আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি পাহাড় ও বিভাগের জায়গা দখলে নিয়েছিল হাছান মাহমুদের পরিবার। যার মোট আয়তন ২১২ একর। বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জের অদূরে সুখবিলাস নামের এই বিনোদন কেন্দ্র ও দুধপুকুরিয়ার একটি মাল্টা বাগানটিও হাছান মাহমুদ পরিবারের বিশাল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। অভিযানের পর এসব এলাকার বড় বড় পুকুর ঘিরে চলে স্থানীয়দের মাছ ধরার হিড়িক। সোমবার থেকে লাগাতার অভিযানে এসব জমিতে গড়ে তোলা সব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় বন বিভাগ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ খুরুসিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'খুরুসিয়া, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম শহর রেঞ্জ একসাথে হয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। গোয়াল রাখার জন্য ৬টা শেডঘর আমরা ভেঙে দেই। এছাড়াও পাশে তিনটা পুকুর ছিল, সেগুলো কেটে পানি নিষ্কাশন করি।'
কর্মকর্তাদের দাবী, এক বছর আগে বেদখলে থাকা এসব জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছিল বন বিভাগ। তবে, হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তা এতদিন সম্ভব হয়নি।
মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, '১০৫ একর আমরা বন বিভাগের দখলে নিয়ে এসেছি। আর বাকিগুলোর অবকাঠামো নেই। এগুলো এমনি বনের জায়গা। এগুলো অচিরেই সবগুলো আমাদের নিজেদের দখলে নিয়ে চলে আসবো।'
অভিযোগ আছে, গত ১৬ বছর ধরে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বন বিভাগের এসব জায়গা দখলে নেয় হাছান মাহমুদের পরিবার। বুধবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত যেসবের ১০৫ একর উদ্ধার হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন বলেন, 'আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে আমাদের বাকি যে বনভূমিগুলো আছে, সেখানে বৃক্ষরোপন করা হবে। জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ প্রস্তাবও দেয়া আছে। সে অনুযায়ী আমরা উচ্ছেদ করছি আর এখানে পিউর মামলা দাখিল করা হবে।'
২০০৮ সাল থেকে টানা চতুর্থবারের মতো চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হাছান মাহমুদ। দেড় দশকেরও বেশি সময় তার ছত্রছায়ায় এলাকায় দখল ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।