২০০৯ সাল থেকে ১৫টি ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেখা হয়নি, এতো ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা ও সক্ষমতা। গত তিন মেয়াদকালেও ব্যাংক কোম্পানিতে সংশোধন এনে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বার বার আনা হয়েছে পরিবর্তন। এখন কোনো কোনোটির অবস্থা এতোই নাজুক যে, জামানত ছাড়া ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০ গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ৭ কোটি ডলারও ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত, এমন সূত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আসার পর মালিকপক্ষের যোগশাযোশে গ্লোডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং স্টার নামে দু'টি বেনামি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৯০ কোটি টাকা আটকে দিয়েছে ইসলামি ব্যাংক। এভাবেই ১৫ বছরে এবি ব্যাংকের অফশোর সার্ভিস থেকে ২৩৬ কোটি টাকা পাচার, এস আলম গ্রুপের ইসলামি ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকা বেআইনি ঋণ, ভুয়া কোম্পানির নামে বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুট, এই সব জালিয়াতি হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘন করে অথবা বিশেষ বিবেচনায়।
সিপিডির তথ্য, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকখাতের ২৪টি জালিয়াতির অর্থের পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এমন বেনামি ঋণ, প্রকৃত ঋণ খেলাপির সংখ্যা, অর্থপাচারের কোনো তথ্যই পরিষ্কার নয়। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংক পুনর্ভরণ করার তথ্য মিললেও এর পরের তথ্য নেই বাজেট পর্যালোচনায়। একরকম অস্বচ্ছ তথ্য নিয়েই শুরু করতে হচ্ছে ব্যাংক সংস্কার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদত্যাগ করলেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক ব্যাংক পরিচালনার কর্তাব্যক্তিদের।
২০০৯ সালে খেলাপি হার ২২ হাজার কোটি টাকা থাকলেও খেলাপি ঋণ এখন সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি। কোনো কোনো ব্যাংকের দেয়া ঋণ এখন আমানতের হারের সীমানা ছাড়িয়েছে। এমনকি জনসম্মুখে নিজেদের তারল্য, ঋণ হার, সঞ্চিতি লাভসহ নানা বিষয় উন্মুক্ত করতে ভেজেল থ্রি পালনের কথা থাকলেও সেসব তথ্য আড়ালেই থাকে মানুষের কাছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলো একই ব্যক্তিকে অধিক ঋণ দেয়ার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্বল ব্যাংক বন্ধ করা হলে আমানতকারীরা যেন তাদের অর্থ ফেরত পায় তা নিশ্চিত করতে সেইফ এক্সিট পলিসিও থাকতে হবে জনকল্যাণে।