জানা গেছে, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যের ওয়েনাদ জেলার মেপ্পাদি, চুড়ামালা ও মুন্ডাক্কাই গ্রাম। সময় যতো গড়াচ্ছে, ততোই বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। যেনো মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে পাহাড়ি জেলাটি। স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
মুন্ডাক্কাই গ্রামের এক ভুক্তভোগী বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বড় ও ছোট ভাই এখানেই থাকতেন। ঘণ্টাখানেক বৃষ্টির পর রাতে আমাদের ঘরে পানি আসতে শুরু করে। দু'ঘণ্টা পর গোটা এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। আমার দুই ছেলে ও স্ত্রী নিজেদের বাঁচাতে চালে উঠতে শুরু করেছিলো।’
স্বজনহারা এক নারী বলেন, ‘আমি আমার ছেলে আর নাতিকে হারিয়েছি। নদী তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। উদ্ধারকারীরা আমার ছেলের লাশ খুঁজে পেয়েছে।’
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই মারা গেছে। তারা দুটি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু এখনও পরিবারের ছয় থেকে সাতজনের মৃতদেহ খুঁজে পায়নি। এখন আমার থাকার জায়গা নেই। বাড়ি বানানোর সামর্থ্যও নেই।’
ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের খুঁজে পেতে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, এনডিআরএফ ও পুলিশ সদস্যরা। অন্তত এক হাজার বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করা হলেও এখনও নিখোঁজ দুশতাধিক বাসিন্দা।
উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে কেরালা সেনাবাহিনী বলছে, তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে তারা। আটকে পড়া এবং উদ্ধারের প্রয়োজন এমন প্রায় সব লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখন ভেঙে পড়া ঘরে ঢুকে দেখতে হবে, কেউ সেখানে আছে কি-না।
অঞ্চলটিতে চা ও এলাচির বাগান থাকায় সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত ওয়েনাদ। এখানকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এখানকার মশলা ও পর্যটন অর্থনীতি বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত অঞ্চলটি বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে গেছেন দেশটির বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দেশটির উত্তরাঞ্চলও। বৃষ্টির তাণ্ডবে হিমাচল প্রদেশে মারা গেছেন ১১ জন। নিখোঁজ আরও অনেকে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিমলা জেলার রামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সরপারাহ গ্রাম।
ভারী বৃষ্টিতে দিল্লিতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। ঝুঁকি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার দিল্লির সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।
আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দিল্লিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। আর কেরালায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।