রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষের অসুখে আরোগ্য লাভের বড় ঠিকানা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এক হাজার শয্যার বিভাগীয় শহরের হাসপাতালটিতে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকার চিত্র যেনো অলিখিত নিয়ম। কারণ উত্তরের রোগীর স্রোত যেনো মেলে এই এক মোহনায়। অথচ, বিভাগে মোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংখ্যা ৫৩ টি।
প্রশ্ন হলো প্রতিটি উপজেলায় একটি করে অন্তত ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও কেনো সবার ছুটতে হয় ২০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে? আর কোন প্রয়োজনেই বা জেলা শহরগুলোর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে শত-শত নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিক?
একজন রোগী বলেন, 'এখানে এক্সরে করতে পারি না। বাইরে থেকে করতে হয়। এখানে মেশিন ভালো থাকলে এখান থেকেই এক্সরে করতে পারতাম। অনেকদিন থেকেই মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে আছে।'
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ, চিকিৎসক সংকট, অপরিষ্কার পরিবেশ, পরীক্ষা নিরীক্ষার ভোগান্তির কারণেই হাসপাতাল বিমুখ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন অভিযোগের সরেজমিন তদারকিতে রংপুর বিভাগের চার জেলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দু'দিনের সফর।
মন্ত্রী আসবেন, তাই পূর্ব নির্ধারিত সূচির হাসপাতাল গুলো চকচকে, পরিষ্কার, সুশৃঙ্খল। সকাল থেকেই এ খাতের সর্বোচ্চ কর্তার অপেক্ষায় কর্মকর্তা, কর্মচারী, এমনকি রোগীরাও। তবে মন্ত্রীর এমন ঝটিকা সফরের পর, ফের ফুরোনো চিত্র। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি সার্বিক সেবা সন্তোষজনক হওয়া শয্যা সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১'শ করার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যদিও আগেই একদফায় শয্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী হয়নি পদায়ন।
দিনাজপুর খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. এটিএম ওবায়দুল্লাহ বলেন, 'কী পরিমাণ সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি স্যার সেটা আমলে নিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমাদের উচ্ছ্বাস দিয়েছেন।'
সূচি অনুযায়ী দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর প্রায় ১০টি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। এছাড়া অনেকগুলো হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেবার দুই থেকে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোনো পদায়ন। তাই মন্ত্রীর এ সফর ঘিরে সরকারি হাসপাতালগুলোর দেখছে সংকট সমাধানের বড় সুযোগ হিসেবে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নামজুল হুদা বলেন, 'শয্যা সংখ্যার সাথে লজিস্টিক সাপোর্ট না দেয়া গেলে এই বেড বাড়ানো শুধু বেড বাড়ানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। আসলে যা শয্যা আছে তার পুরো লজিস্টিক আমি পেয়ে গেলে সেবার মান আরও উন্নত হবে।'
রংপুর বিভাগে ৫৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছড়াও রয়েছে ২৫টি বড় সরকারি হাসপাতাল, ছয়টি চক্ষু হাসপাতাল, ১০টি নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রয়েছে ছয়টি টিবি ক্লিনিক। এসব হাসপাতালে দৈনিক হাজারো মানুষ সেবা নিলেও সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মানে তেমন একটা তারতম্য নেই বলে অভিযোগ, স্থানীয়দের। আর এসব সংকট দ্রুত সমাধানের আশ্বাস স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, 'সারা বাংলাদেশেই বেড ৫০ থেকে ১০০ করার জন্য তালিকা দেয়া আছে। কোন জায়গায় করা বেশি দরকার, সে অনুযায়ীই আমরা করবো। একবারেই তো সবকিছু করা সম্ভব না। তবে, এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।'